আল-জামিয়া পটিয়ার সংবিধান

ভূমিকা:

মজলিশে শুরার কতিপয় সদস্য এ ব্যাপারে জামেয়া প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, মাদ্রাসার খেদমত (সেবা) এ কার্যক্রমের পরিধি অনেক বিস্তৃত হতে যাচ্ছে। অতএব মাদ্রাসার উন্নতি-অগ্রগতি প্রতক্ষ্য করে অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো এর সাথে সংযোজিত হচ্ছে। সুতরাং জরুরী ভিত্তিতে মাদ্রাসার মূলনীতি ও সংবিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। যার প্রেক্ষাপটে জামেয়ার বিভাগীয় কার্যক্রম ও তৎসংশ্লিষ্ট মাদ্রাসাসমূহ এ বিভাগের আওতাধীন হয়ে সুচারুরূপে দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসারের গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন করতে সমর্থ হবে।

অতএব, উক্ত পরামর্শের ভিত্তিতে জামেয়া প্রধান সংবিধান রচনাপূর্বক ২৯ শে জিলক্বদ ১৩৭৯ হিজরী জামেয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে পেশ করেন এবং মজলিশে শূরা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেন জামেয়া প্রধানের উপর এর প্রকাশনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।

 

সংবিধান

১. এ প্রতিষ্ঠানের নাম হবে ‘জামেয়াতুল ইসলামিয়া’ প্রকাশ-জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা।

পরিচিতি:

২. এ বিধিবিধান ও নীতিমালার সমষ্টিগত নাম হবে ‘জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সংবিধান’।

৩. এ সংবিধান প্রণয়ন ও অনুমোদনের তারিখ, ২৯ শে জিলক্বদ, ১৩৭৯ হিজরী থেকে পূর্বেকার যাবতীয় আইন ও বিধি-বিধান রহিত করা হয়েছে।

 

জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মৌলিক নীতিমালা:

(ক) আরবী ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা অর্থাৎ কোরআন, হাদীস, ফিকহ, আকায়েদ, তাফসীর ও কালামশাস্ত্র এবং ধর্মীয় অন্যান্য বিষয়াবলী মুসলমানদেরকে শিক্ষা দেয়া।

(খ) আরবী ভাষায় জ্ঞানার্জন এবং ধর্মীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণার্থে যে সব জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শাস্ত্রের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন যা উপকারী হয়, তদ্রুপ উর্দূ, ফারসী, বাংলা, ইংরেজী প্রভৃতি ভাষাসমূহ ও প্রয়োজনমত শিক্ষা দেওয়া।

(গ) রচনা, বক্তৃতা এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও তাবলীগের মাধ্যমে ইসলামের হেফাজত ও প্রচার-প্রসারের দায়িত্ব পালন করা এবং মুসলমানদের মধ্যে সলফে সালেহীনের ন্যায় ইসলামী আখলাক, আমল ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা।

(ঘ) অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সীমা এতটুকু থাকা প্রয়োজন, যাতে আপন লক্ষ্য শিক্ষা তথা তালীমের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর না হয়, বরং মূল লক্ষ্যের ক্ষেত্রে উপকারী বিবেচিত হয়।

(ঙ) ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা সমূহকে ‘জামেয়ার’ সাথে সংযুক্ত করা।

 

জামেয়ার মসলক বা আদর্শ:

৪. জামেয়ার মসলক বা আদর্শ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের’ মাযহাব এবং পাঠ্যসূচী, শিক্ষাপদ্ধতি ‘দারুল উলম দেওবন্দ’ এর অনুরূপ হবে।

৫. জামেয়ার মসলক বা আদর্শের হেফাজত (যা দফা নং-৪ এ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে) জামেয়ার সকল সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্যে অপরিহার্য্য।

৬. জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ার কোন শিক্ষক-কর্মচারী বা কোন ছাত্রের জন্য এমন কোন সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান অথবা কোন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণের অনুমতি থাকবে না যা জামেয়ার ‘মসলক’ অথবা স্বার্থের পরিপন্থি। ‘ক্ষতিকর’ কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবেন জামেয়ার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।

 

পরিচালনা কমিটি:

৭. জামেয়া ইসলামিয়ার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি কমিটি থাকবে। একটির নাম হবে ‘মজলিসে শূরা’ বা মন্ত্রণা পরিষদ এবং অপরটির নাম হবে ‘মজলিসে আমেলা’ বা নির্বাহী পরিষদ। জামেয়ার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একজন সর্বোচ্চ যিম্মাদার থাকবেন, যাকে ‘জামেয়া প্রধান’ নামে অভিহিত করা হবে এবং তার একজন ‘নায়েব’ বা উপ-প্রধান ও একজন ‘সহকারী’ থাকবেন।

 

মজলিসে শূরার ক্ষমতা  কার্যাবলী:

(ক) ‘মজলিসে শূরা’ বা মন্ত্রণা পরিষদ জামেয়ার একটি ক্ষমতাসম্পন্ন ও স্বাধীন কমিটি হিসাবে গণ্য হবে এবং জামেয়ার পরিচালনা ও শৃঙ্খলা বিধানের যাবতীয় কার্য তাদের হাতে ন্যাস্ত হবে।

(খ) জামেয়ার পরিচালনার জন্য আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, পূর্ববর্তী আইন ও নীতিমালা রহিত করা কিংবা সংযোজন বা সংশোধন করা।

(গ) জামেয়ার শিক্ষক ও কর্মচারীগণের নিযোগ, অব্যহতি এবং তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও বৃদ্ধি করা।

(ঘ) জামেয়ার বিভিন্ন বিভাগের সিদ্ধান্তসমূহের অনুমোদন দেয়া কিংবা প্রত্যাখ্যান করা।

(ঙ) পাঠ্যসূচী অনুমোদন করা কিংবা সংশোধন করা।

(চ) জামেয়ার কোষাগার হিফাজত করা এবং আয়-ব্যায়ের নীতিমালা নির্দিষ্ট করা এবং পরীক্ষা করা।

(ছ) জামেয়ার মালিকানাধীন ও ওয়াকফকৃত যাবতীয় সম্পত্তির উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনবশতঃ মামলা-মোকদ্দামা সংক্রান্ত কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া।

(জ) ছাত্রদের আবশ্যিক বিষয়াবলীর রূপরেখা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের নিমিত্তে মৌলিক পদ্ধতিসমূহ নির্ধারণ করা।

(ঝ) বার্ষিক আয়-ব্যায়ের হিসাব পরীক্ষা নিরীক্ষা পূর্বক অনুমোদন দেয়া।

(ঞ) উল্লেখিত ক্ষমতা ও কার্যাবলী ছাড়া জামেয়ার উন্নতি-অগ্রগতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন ও কল্যাণকর মনে হয়, সবকিছুর ক্ষমতা ‘মজলিসে শূরার’ হাতে থাকবে।

(ট) জামেয়ার সকল চাঁদা দাতা এবং সাহায্যকারীর পক্ষ থেকে ‘মজলিসে শূরা’ শরয়ী প্রতিনিধি হবেন।

(ঠ) মজলিসে শূরার প্রত্যেক সদস্যের এ ক্ষমতা ও অধিকার আছে যে, ইচ্ছে করলে তিনি জামেয়ার সকল বিভাগের প্রধানকে অবহিত পূর্বক প্রত্যেক বিভাগ পরিদর্শন করবেন এবং পরিদর্শন বহিতে স্বীয় মন্তব্য লিপিবদ্ধ করবেন।

(ড)  ‘মজলিসে শূরা’ ইচ্ছে করলে যে কোন সদস্যকে শূরার বৈঠকে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সদস্যের লিখিত রায় যথেষ্ট বলে গণ্য হবে।

(ঢ) ‘মজলিসে শূরা’ প্রয়োজনবশতঃ নিজের বিশেষ কোন ক্ষমতা কিংবা একাধিক ক্ষমতা ‘সাব কমিটির’ হাতে সোপর্দ করতে পারবে।

 

মজলিসে শূরা গঠন পদ্ধতি:

৮. ‍মজলিশে শূরার সদস্য সংখ্যা হবে অনুর্ধ্ব একুশ জন।

৯. যেহেতু জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া একটি ‘কওমী’ বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সেহেতু দেশের প্রত্যেক এলাকার এমন সর্ব ওলামায়ে কেরাম এ কমিটি সদস্য হবেন। যাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকে এবং এ ধরণের কাজকর্মের বাস্তব অভিজ্ঞতার অধিকারী হন অথবা ন্যুনপক্ষে এ ধরণের কাজ সম্পর্কে অবগত ও দক্ষতার অধিকারী হন।

১০. জামেয়া প্রধান ও শিক্ষা বিভাগের পরিচালক উভয়ে পদাধিকার বলে ‘মজলিশে শূরার’ সদস্য হবেন। প্রত্যেক বিষয়ে তাঁদের রায় ও মতামত যাচাই করা হবে। যদি তা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়।

১১. ‘মজলিশে শূরার’ সদস্য পদের মেয়াদকাল হবে ৩ বৎসর। মনোনয়নের তারিখ থেকে মেয়াদ গণনা করা হবে।

১২. সকল সদস্যের মসলক বা আদর্শ জামেয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং শরীয়তের অনুমোদিত হতে হবে।

১৩. সদস্য পদের মেয়াদকাল শেষ হবার পর প্রত্যেক সদস্যকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হবে এবং দ্বিতীয়বার ‘শূরার’ সদস্য মনোনীত করা হবে। মধ্যবর্তী সময়ে ‘মজলিশে শূরার’ যাবতীয় ক্ষমতা ‘জামেয়া প্রধানের’ হাতে ন্যাস্ত থাকবে। এ মধ্যবর্তী সময় অনধিক একমাস হতে পারবে।

১৪. মেয়াদকাল শেষ হবার পূর্বে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যগণ মজলিশে শূরার অধিবেশনে শূন্য পদগুলো পূরণ করবেন।

 

মজলিশে শূরার সভাপতি  সম্পাদক:

১৫. মজলিশে শূরার অধিবেশন চলাকালে শূরার সদস্যগণ যে কোন একজন সদস্যকে অধিবেশনের সভাপতি মনোনীত করবেন।

১৬. জামেয়া প্রধান মজলিশে শূরার সম্পাদক হবেন।

 

শূরার সদস্যপদের বিলুপ্তি:

১৭. নিম্নেলিখিত কারণে শূরার সদস্যপদ বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

(ক) যদি কোন সদস্য পরলোক গমন করেন (ওফাত)।

(খ) কোন সদস্য নিজের সদস্যপদ থেকে ইস্তিফা দিলে এবং মজলিশে শূরা ইস্তিফানামা গ্রহণ ও অনুমোদন করলে।

(গ) জামেয়ার স্বার্থের পরিপন্থী কোন কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে মজলিশে শূরা যদি কারোর সদস্যপদ বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

(ঘ) যদি কোন সদস্য একাধারে তিনটি অধিবেশনে বিনা কারণে অংশগ্রহণ না করেন এবং এর ভিত্তিতে মজলিশে শূরা তার সদস্যপদ বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

 

মজলিশে শূরার অধিবেশন:

১৮. প্রতিবছর একবার শূরার অধিবেশন করা আবশ্যক এবং এজন্যে জিলক্বদ মাসই উপযুক্ত মাস।

১৯. নিয়মিত অধিবেশন ছাড়াও নিম্নে বর্ণিত জরুরী অবস্থাও অধিবেশন আহবান করা যেতে পারে।

(ক) যদি জামেয়া প্রধান অধিবেশন ডাকা জরুরী মনে করেন।

(খ) নির্বাহী পরিষদ যদি তাঁর প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

(গ) মজলিশে ‍শূরার কোন সদস্যের প্ররোচনা বা আগ্রহের প্রতি আবেদনে (তৎপরতার) যদি শূরার অধিকাংশ সদস্য সমর্থন দান করেন এমতাবস্থায় তাঁর লিখিত আবেদন পেশ করার ৯০ দিনের মধ্যেই শূরার অধিবেশন আহবান করতে জামেয়া প্রধান বাধ্য থাকবেন। যদি জামেয়া প্রধান যথাযথ বা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে উক্ত সদস্য ইচ্ছে করলে পরিস্থিতির বিবরণ উল্লেখপূর্বক শূরার সদস্যগণকে অধিবেশনে মিলিত হবার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন।

২০. মজলিশে শূরার বার্ষিক অধিবেশনের দাওয়াতনামা আলোচ্য সূচী সমেত অধিবেশনের অন্ততঃ ১৫ দিন পূর্বে প্রেরণ আবশ্যক। তবে জরুরী পরিস্থিতিতে এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যেও প্ররণ করা যেতে পারে।

 

মজলিশে শূরার সভাপতির দায়িত্ব  ক্ষমতা:

২১. (ক) বৈঠকের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও নীতিবিরুদ্ধ আলোচনায় বাদা প্রদান করা।

(খ) প্রয়োজনানুসারে বৈঠক বাতিল বা মূলতবী ঘোষণা করা।

(গ) আকস্মিকভাবে কোন জরুরী বিষয়কে উপস্থাপনের অনুমতি প্রদান করা।

(ঘ) উপযোগিতা অনুযায়ী এজেন্ডার (আলোচ্য বিষয়) কোন বিষয়কে প্রধান্য দেওয়া বা না দেওয়া।

 

মজলিশে শূরার কোরাম এবং ব্যবস্থাপনা:

২২. আলোচ্য বিষয় সমর্থন লাভের জন্য বৈঠকে এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট।

২৩. মজলিশে শূরার ফায়সালা অধিকাংশ সদস্যের অভিমতের ভিত্তিতে হবে। যদি উভয়পক্ষের সমর্থকের সংখ্যা সমান হয় তাহলে সভাপতি সাহেব সমানুগ্য বিধান পূর্বক সিদ্ধান্ত নেবেন।

২৪. মজলিশে শূরার প্রত্যেক বৈঠকের কার্য বিবরণী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সভাপতি সাহেব বিবরণ পত্রে স্বাক্ষর করবেন।

কার্য নির্বাহী পরিষদ:

২৫. ‘কার্য নির্বাহী পরিষদ’ একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পরিষদ। জামেয়ার সমস্ত কার্যাদি অত্র পরিষদের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

২৬. সাত সদস্যের সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠিত হবে। জামেয়া প্রধান এবং শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের প্রধান উক্ত পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্য হিসাবে থাকবেন এবং অবশিষ্ট পাঁচ সদস্য মজলিশে শূরার অন্যান্য সদস্য থেকে নির্বাচিত হবেন।

২৭. কার্য নির্বাহী পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা মজলশে শূরার সমতুল্য হবে, তবে মজলিশে শূরা যদি কার্য নির্বাহী পরিষদের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তবে তা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াবে।

২৮. কার্য নির্বাহী পরিষদের যে কোন ব্যক্তিকে এযাযী সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে এবং তিনি পরিষদের যে কোন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে ভোট প্রদানে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না।

২৯. বছরে একবার এ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

৩০. প্রতি তিন মাস অন্তর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

৩১. নির্ধারিত বৈঠক ব্যতীত জামেয়া প্রধান যদি অতিরিক্ত কোন বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারটি উপলব্ধি করেন অথবা কার্য নির্বাহী পরিষদের অধিকাংশ সদস্য তা প্রয়োজন মনে করেন অথবা মজলিশে শূরা তা প্রয়োজন মনে করেন, তবে যে কোন সময় বৈঠক আহবান করা যেতে পারে।

৩২. পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে এ পরিষদের কোরাম হবে।

৩৩. উক্ত পরিষদের সভাপতি উপস্থিত সদস্যবৃন্দের মধ্য হতে নির্বাচিত হবেন।

৩৪. এ পরিষদে নির্ধারিত ও অনির্ধারিত বৈঠক সম্পর্কে প্রত্যেক সদস্যকে তিন দিন পূর্বে অবহিত করতে হবে।

জামেয়া প্রধান:

৩৫. জামেয়ার সমস্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একজন উচ্চ পর্যায়ের যিম্মাদার (দায়িত্বশীল) থাকবেন, যাকে জামেয়া প্রধান বলা হবে। তিনি নিম্নোলিখিত গুণাবলীর অধিকারী হবেন।

(ক) আলেমে বা আমল অর্থাৎ খোদাভীরু হতে হবে।

(খ) আমানতদারী ও তাকওয়ার ব্যাপারে জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে এর সাথে সাথে জামেয়ার কর্মচারীবৃন্দের উপর তাঁর প্রভাব থাকতে হবে।

(গ) জামেয়ার নীতিমালার উপর অবিচল থাকতে হবে।

(ঘ) প্রশাসনিক যোগ্যতার সাথে সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে।

(ঙ) জামেয়ার কল্যাণ সাধনই তাঁর একমাত্র ব্রত হবে।

(ড) উত্তম চরিত্র, শান্ত মেজাজ এবং নিজকে ছোট মনে করার মত মহৎ গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে।

৩৬. জামেয়া প্রধানকে সমস্ত বিভাগীয় ও মালী কার্যাবলীর ব্যাপারে মজলিশে শূরা এবং কার্য নির্বাহী পরিষদের নিকট জওয়াবদিহী করতে হবে। ‍

জামেয়া প্রধানের দায়িত্ব:

৩৭. (ক) জামেয়ার যাবতীয় দলিলপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রভূতি সংরক্ষণ করা।

(খ) মজলিশে শূরা ও কার্য নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা।

(গ) মজলিশে শূরা ও কার্য নির্বাহী পরিষদের সভা আহবান করা এবং (এজেন্ডা) আলোচ্য বিষয় নির্ধারণপূর্বক সদস্যবৃন্দের নিকট প্রেরণ করা।

(ঘ) মজলিশে শূরা এবং কার্য নির্বাহী পরিষদের সভাগুলোর রির্পোট তৈরী করা।

(ঙ) জামেয়া সম্পর্কিত চিঠিপত্র এবং যাবতীয় চিঠিপত্রের উত্তর স্বাক্ষর পূর্বক প্রেরণ করা।

(চ) মজলিশে শূরার সিদ্ধান্ত সমূহের অনুলিপি সদস্যবন্দের নিকট প্রেরণ করা।

(ছ) জামেয়ার মানিঅর্ডার এবং হাতে হাতে প্রাপ্ত নগদ অর্থ স্বাক্ষরযুক্ত রসিদ অথবা চেকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা।

(জ) মুতাওয়াল্লী হিসাবে জামেয়ার ওয়াকফকৃত সম্পদ ও স্থাবর সম্পদ অধিকারে আনা।

(ঝ) দৈনন্দিন জমা খরচ পরীক্ষাপূর্বক তাতে দস্তখত করা।

(ঞ) জামেয়ার আর্থিক ব্যয় অনুমোদন করা এবং স্বাক্ষরযুক্ত চেক ইত্যাদি হস্তান্তর করা।

(ট) প্রয়োজনবশতঃ মোকদ্দমা পরিচালানা করা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত কাগজপত্রে নির্দেশ লিখা।

(ঠ) বিভাগীয় কাগজপত্রে নির্দেশ লিখা।

(ড) বিভাগীয় দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা এবং সমস্যা সমাধান করা।

(ঢ) ছাত্রদের থাকা, খাওয়া, কিতাব এবং অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করা।

(ণ) বিভাগীয় কার্যকলাপ পরিদর্ন করা এবং কিতাব ও এর সম্পর্কীয় কাগজপত্রের রিপোর্ট লিখা।

(ত) বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা।

জামেয়া প্রধানের ক্ষমতা:

৩৮. মজলিশে শূরার পক্ষ হতে জামেয়া প্রধান নিম্নলিখিত ক্ষমতার অধিকারী হবেন।

(ক) জামেয়ার জন্য গৃহীত কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান।

(খ) কোন শিক্ষক বা কর্মচারী যদি তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন করেন অথবা জামেয়ার আইন-শৃঙ্খলা বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে দু’একবার তাকে সতর্ক করা, এর পরও তার কর্মকান্ড সন্তোষজনক না হলে কার্য নির্বাহী পরিষদে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করা।

(গ) যে সমস্ত ছাত্র জামেয়ার পরিবেশ কলুষিত করে অথবা প্রকাশ্যে জামেয়ার কোন আইন অমান্য করে অথবা জামেয়ার শিক্ষকবৃন্দের সাথে অসৎ ব্যবহার করে তাহলে তাদেরকে হুঁশিয়ার করা বা জামেয়া হতে বহিস্কার করা।

(ঘ) জামেয়ার আমদানী (আয়ের) এর কাজ চালিয়ে নেওয়া এবং উক্ত সদস্য লিখিতভাবে কার্য নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা।

(ঙ) বিভাগীয় পরিচালকবৃন্দকে বিভাগীয় আইন-কানুন সমূহ কার্য নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক অনুমোদন করার ব্যাপারে পরামর্শ দান করা।

৩৯. জামেয়া প্রধানের ক্ষমতা থাকবে যে, কাজের সুবিধার্থে বর্তমান বিভাগগুলো অথবা ভবিষ্যতে যত বিভাগ খোলা হবে এর প্রত্যেক অথবা কয়েকটি বিভাগের জন্য এমন একজন সুদক্ষ পরিচালক বা নাজেম নিযুক্ত করা, যাঁর মধ্যে ওই সকল খেদমতের জন্যে নাজেম সাহেবানকে ভাতা (বেতন) প্রদান করা হবে।

৪০. বিভাগীয় নাজেম জামেয়া প্রধানের নিকট জবাবদিহী করবেন এবং প্রয়োজনবশতঃ কার্য নির্বাহী পরিষদের নিকটও জাবাবদিহী করবেন।

 

নায়েব বা সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব  ক্ষমতা:

৪১. নায়েব ও সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব ও ক্ষমতা জামেয়া প্রধানের প্রদত্ত ক্ষমতার মধ্যে সীমিত থাকবে।

৪২. জামেয়া প্রধানের অনুপস্থিতিতে সহকারী প্রধানের দায়িত্ব এবং ক্ষমতা জামেয়া প্রধানের অনুরূপ হবে।

৪৩. মজলিশে শূরা অথবা কার্য নির্বাহী পরিষদের পক্ষ হতে যদি কোন ব্যক্তিকে প্রধান পরিচালকের স্থানে নিযুক্ত করা হয়, তবে তাঁর ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রধান পরিচালকের সমতুল্য হবে।

জামেয়া শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের প্রধান:

৪৪. শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের প্রধান নিম্নোল্লোখিত গুণাবলীর অধিকারী হবেন।

(ক) জামেয়ার নীতিমালার উপর অটল থাকা।

(খ) দ্বীনি ইলমে বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ হতে হবে।

(গ) খোদাভীতি এবং সততার (তাকওয়ার) ব্যাপারে জামাতের মধ্যে অন্যতম গ্রহণযোগ্য স্বীকৃত হতে হবে।

(ঘ) প্রভাবশালী এবং (সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদানকারী) বিচারক হতে হবে।

(ঙ) বিভাগীয় দায়িত্ব (যিম্মাদারী) এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকান্ডে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ হতে হবে।

(চ) কর্মঠ ও ব্যক্তিত্বশীল হতে হবে।

(ছ) জামেয়ার ব্যাপারে (মুখলেছ) আন্তরিক হতে হবে।

(জ) শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের প্রধান, শিক্ষা বিভাগের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল (যিম্মাদার) হবেন এবং কার্য নির্বাহী পরিষদ ও জামেয়া প্রধানের নিকট জবাবদিহি হবেন।

 

তালীমাত শিক্ষা পরিচালা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব  ক্ষমতা:

৪৫. (ক) (তা’লীমাত) শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যের রক্ষণা-বেক্ষণ।

(খ) ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করা, ছাত্রদের ভর্তি করা এবং না করা তার উপর নির্ভরশীল।

(গ) পুরাতন ছাত্রদের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের উন্নতি-অবনতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

(ঘ) শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভে পাঠ বন্টন করা এবং প্রয়োজন বশতঃ তা পরির্তন করা।

(ঙ) পাঠ্যসূচী অনুসারে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনানুসারে পাঠ্যসূচী পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য কার্য নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা।

(চ) ত্রৈমাসিক, ষাষ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষাসমূহ পরিচালনা করা এবং পাঠ্য সীমা চিহ্নিত পূর্বক কিতাবসমূহ পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা ও না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। পরীক্ষার ফলাফল রেজিষ্ট্রিতে লিপিবদ্ধ করা, যোগ্য ছাত্রদের পুরস্কারের তালিকা তৈরী করা, পুরস্কার নির্ধারণ করা, অকৃতকার্য ছাত্রদের নামের তালিকা তৈরী করে জামেয়া প্রধানের নিকট হস্তান্তর করা যাতে তাদের ব্যাপারে বিশেষ বিধানের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

(ছ) শিক্ষাদানের সময় শিক্ষক ও ছাত্রদের উপস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখা এবং পাঠ্য বিষয় সমাপ্তির ব্যবস্থা করা।

(জ) শিক্ষকদের সাধারণ অবহেলার জন্যে হুঁশিয়ার করা, বার বার অথবা সাধারণ নয়, এমন অবহেলা প্রদর্শনের জন্যে জামেয়া প্রধানের নিকট রিপোর্ট পেশ করা। ছাত্রদের ক্ষেত্রে বহিস্কার ব্যতীত অন্য সকল শাস্তি কার্যে পরিণত করা।

(ঝ) অধীনস্ত বিভাগের রিপোর্টসমূহ কার্য নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা।

(ঞ) ছাত্রদের লেখাপড়া ও চরিত্রের দিকে লক্ষ্য রাখা। সময় সময় তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত দ্বারা চরিত্র গঠনে অনুপ্রাণিত করা, দুশ্চরিত্রের ও অপকর্মে লিপ্ত ছাত্রদেরকে শাস্তি প্রদান করা।

(ট) যে ছাত্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জামেয়ার নীতির বিরুদ্ধাচরণ করবে, কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন করবে, জামেয়ার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের সামনে ঔদ্ধত্য পূর্ণ আচরণ করবে কিংবা শরীয়ত বিরোধী কোন কর্মে আত্মনিয়োগ করবে সে বহিস্কারের যোগ্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে জামেয়া প্রধানের নিকট রিপোর্ট পেশ করা।

জামেয়ার ছাত্রবৃন্দ:

৪৬. জামেয়ার ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের নিকট থেকে মাসিক কোন ফিস নেওয়া হবে না বরং নির্দিষ্ট কানুন অনুযায়ী জামেয়া ছাত্রদের খোরাকী, কিতাব এবং বাসস্থানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন।

৪৭. জামেয়ার পক্ষ থেকে ছাত্রদেরকে শিক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা, উপদেশ ও আইন-কানুন সম্পর্কীয় যে পরামর্শ দেওয়া হয়, তা অবশ্য প্রতিপালন করতে হবে।

৪৮. আচার-আচরণ ও স্বভাবের ক্ষেত্রে ছাত্রদেরকে শরীয়তের অনুসরণ করা জরুরী। অবাধ্য ছাত্র (জামেয়ার কানুন লংঘনকারী) বহিস্কারের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

জামেয়ার শিক্ষাবছর:

৪৯. জামেয়ার শিক্ষা বছর শাওয়াল মাস থেকে শুরু হবে এবং শাবান মাসে শেষ হবে এবং অর্থ বছরও একই শাবান থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী রজব মাসে সমাপ্ত হবে।

৫০. নাজেরা (ইসলামী কিন্ডারগার্টেন) এবং ‘তাহফীজুল কুরআন’ বিভাগের শিক্ষক, কর্মচারীবৃন্দকে রমজান মাসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে ডবল ভাতা (বেতন) প্রদান করা হবে।

৫১. জামেয়ার প্রতিদিন ছয় ঘন্টা শিক্ষা প্রদান করা।

৫২. কর্মচারীদেরকে কাজের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে অফিস কর্মকর্তা জামেয়া প্রধানের সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে সময় নির্ধারণ করবেন।

 

জামেয়ার পরীক্ষা:

৫৩. বছরে দু’বার ছাত্রদের পাঠ্য বিষয়ের উপর এবং বছরের শেষে বার্ষিক পরীক্ষা হবে। ঐ পরীক্ষার ফলাফলের উপর তাদের উন্নতি এবং খোরাকীর ব্যবস্থা নির্ভর করবে।

 

জামেয়ার (বন্ধছুটি:

৫৪. ২৫ শে শাবান হতে ৫ই শাওয়াল পর্যন্ত জামেয়া বন্ধের পর খোলা হলে পুনরায় ৬ই শাওয়াল হতে নতুন বছরের শিক্ষা শুরু হবে।

৫৫. ঈদুল আযহায় ৫ই জিলহজ্ব হতে ১৬ জিলহজ্ব এবং প্রতি জুমাবার দফতর (অফিস) এবং মতবখ (হোটেল) ব্যতীত অন্য সবকিছু বন্ধ থাকবে।

৫৬. কোন শিক্ষক বা কর্মচারী অবকাশের (ছুটি) সময় বিভাগীয় দায়িত্বশীলের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি নেই।

৫৭. বন্ধে (ছুটির দিনে) কোন শিক্ষক বা কর্মচারীকে জামেয়া প্রধান তাৎক্ষণিক কোন প্রয়োজনীয় কাজে নিয়োগ করলে তাঁর ‍উপর উক্ত কাজের দায়িত্ব বর্তাবে, এজন্য তাঁকে অতিরিক্ত ভাতা প্রদান করা হবে।

 

শিক্ষক  কর্মচারীবৃন্দের ছুটি:

৫৮. হিসাব বিভাগ ও মতবখের কর্মচারী এবং নাজেরা ও হিফজ বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী ব্যতীত অন্যন্য শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ বার্ষিক ২২ দিন ঘটনা ক্রমে ছুটি (বেতনসহ) পেতে পারেন। নবাগত শিক্ষক ছয় মাস পরে ১১ দিন (এত্তেফাকিয়া) ছুটির বেতন পেতে পারেন। ‍

৫৯. রুগ্ন ও পীড়িত ব্যক্তি বার্ষিক একমাস ছুটি পেতে পারেন তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলের পক্ষ থেকে পীড়িতের কর্মে যোগদানের অক্ষমতা, স্বীকৃত হতে হবে।

৬০. কোন কর্মচারী বা শিক্ষক বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। এক্ষেত্রে তিনি বিরুদ্ধাচরণকারী র্ভৎসনার যোগ্য। এমনটি বার বার হলে তিনি বহিস্কারের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

৬১. যদি বেশী দিনের ছুটি প্রয়োজন হয়, তাহলে ছুটি দিবসের এক সপ্তাহ পূর্বে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে ছুটি অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬২. হিসাব বিভাগ ও রন্ধনশালার কর্মচারীগণ এবং  নাজেরা ও হিফজ বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী যেহেতু দীর্ঘছুটিতে কোন উপকৃত হয় না সেহেতু তাদের এন্তেজামিয়া ছুটি এক মাস হবে।

৬৩. জামেয়ার উচ্চপদস্থ কর্মচারীবৃন্দের পদমর্যদা নির্ণয় ও পদোন্নতি মজলিশে শূরা কর্তৃক নির্ণিত পদমর্যাদার অন্তর্ভূক্ত হবে।

 

কর্মচারীদের পদচ্যুতি:

৬৪. কোন কর্মচারী যদি অবসর গ্রহণ করতে চান তাহলে একমাস পূর্বে জামেয়া প্রধানকে অবহিত করা প্রয়োজন। তদ্রুপ ছাটাইকৃত কর্মচারীকেও একমাস পূর্বে অবগত করানো প্রয়োজন।

 

সফর (যাতায়ত):

৬৫. শূরা বা কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং জামেয়ার কর্মচারীবর্গের সফর (যাতায়ত) ইত্যাদি জামেয়ার উপলক্ষ্যে হলে, সফরের খরচ জামেয়ার পক্ষ থেকে আদায় করা যাবে।

৬৬. জামেয়া যদি কোন বুযুর্গ বা জামেয়ার শুভাকাঙ্খীকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে তার যাবতীয় খরচ জামেয়ার পক্ষ থেকে আদায় করা যাবে।

৬৭. যে ব্যক্তি জামেয়ার প্রয়োজনীয় কার্যে হিসাবানুযায়ী অর্থ গ্রহণ করবে, কর্ম সম্পাদনের পর সমুদয় হিসেব জামেয়াকে বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না। দীর্ঘ সময় জনিত কর্মের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ১৫ দিনের ব্যয়কৃত অর্থের হিসাব জমা দেওয়া প্রয়োজন।

৬৮. জামেয়ার যে কোন অর্থ সঠিক সময়ে জমা না দেওয়া এবং অকারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করাকে খিয়ানত হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।

৬৯. সমস্ত বছরের অডিটর নিয়োগ পরীক্ষা করার জন্যে মজলিশে শূরা কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করবেন। পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত রিপোর্ট আকারে প্রকাশ ও প্রচার করা হবে।

৭০. বিগত ২২-০২-২১ হিজরী মোতাবেক ২৭-০৫-২০০০ ইংরেজী তারিখের অধিবেশনের ৫নং সিদ্ধান্তে আল জামেয়ার সংবিধান নিম্নরূপ সংশোধিত ও অনুমোদিত হয়।

(ক) সংবিধানের নামে ‘পটিয়া’ শব্দটি সংযুক্ত করা।

(খ) জামেয়ার প্রধানের পদবী বিভিন্ন ভাষায় নিম্নরূপ হবে: আরবীতে ‘রাঈস’ উর্দূতে ‘মুহতামিম’, বাংলায় ‘মহা পরিচালক’ এবং ইংরেজীতে ‘রেক্টর’।

(গ) ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় জামেয়ার নাম ভবিষ্যতে নিম্নরূপ হবে;

ইংরেজী: AL JAMEAH AL ISLAMIAH, PATIYA.

বাংলা: আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া।

দারুল উলূম দেওবন্দের উসূলে হাশতগানা বা আট মূলনীতি

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনী মারকাজ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত দারুল উলূম দেওবন্দ পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আট দফা মূলনীতি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছিল এবং যা উছুলে হাশতগানা নামে পরিচিত। উক্ত আট দফা মূলনীতি এখানে লিপিবদ্ধ করা গেল।

১.মাদ্রাসার আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে গভীর দৃষ্টি রাখতে হবে । নিজে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবেন এবং অন্যান্যদের দ্বারাও চেষ্টা চালাবেন। মাদ্রাসার হিতাকাংখীগণকেও এ কথাটি সর্বদা মনে রাখতে হবে।

২.ছাত্রদের খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে বরং ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে মাদ্রাসা হিতাকাংখীগণকে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।

৩.মাদ্রাসার পরামর্শদাতাগণকে (কর্তৃপক্ষকে) সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে, যাতে মাদ্রাসার পরিচালনা ব্যবস্থা সুন্দর, সুখ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়। নিজের মতকে ঠিক রাখার জন্য যেন বাড়াবাড়ি করা না হয়। আল্লাহ না করুন, যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যে- আপন মতের বিপরীত মত গ্রহণ বা পরামর্শ গ্রহণের মত সহনশীলতা পরামর্শদাতাগণের থাকবে না, তখন এ মাদ্রাসার বুনিয়াদ টলমল হয়ে পড়বে ।

মোট কথাঅন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পরামর্শ দেবার সময় এবং তার আগে পরেও মাদ্রাসার সুব্যবস্থা ও সুশৃংখলার প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে । আর কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয় যেন পরামর্শদাতাগণ মতামত প্রকাশে কোন প্রকার দ্বিধাগ্রস্থ না হয়ে পড়েন। আর উপস্থিত শ্রোতাগণও যেন তা ধৈর্য ও নেক নিয়্যতের সাথে শ্রবণ করেন ।

অর্থাৎ এরূপ খেয়াল রাখতে হবে যে অন্যের কথা যদি বুঝে আসে- তা আমাদের মতের বিপরীতই হউক না কেন- অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মেনে নিব ।

এবং এ কারণেও এটা জরুরী যে, মুহতামিম সাহেব সর্বদা পরামর্শ সাপেক্ষে কার্যাবলীর ব্যাপারে যোগ্য পরামর্শদাতাদের থেকে অবশ্যই পরামর্শ গ্রহণ করবেন, তাঁরা মাদ্রাসার নিয়মিত পরামর্শদাতা হ’ন অথবা ইলম ও অভিজ্ঞতার অধিকারী এবং মাদ্রাসার হিতাকাংখী কোন আগন্তুকই হন। এবং এ কারণেও জরুরী যে, যদি ঘটনাক্রমে কোন কারণে পরামর্শদাতাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ না ঘটে এবং যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তখন কেউ শুধু এ অজুহাতে যেন অসন্তুষ্ট না হন যে, আমাকে কেন জিজ্ঞেস করা হ’ল না। অবশ্য মুহতামিম সাহেব যদি কাউকেই জিজ্ঞেস করে না থাকেন তখন অবশ্য পরামর্শদাতাগণ আপত্তি তুলতে পারেন।

৪.মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দের সমমনা হওয়া একান্ত আবশ্যক যেন দুনিয়াদার আলেমদের ন্যায় অহংকারী এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্নকারী না হন । আল্লাহ না করুন যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তখন এ মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে ।

৫.পূর্ব নির্ধারিত দরস বা পরে পরামর্শক্রমে যা স্থির হয়, যথা সময়ে তা সমাপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নচেৎ এ মাদ্রাসা জমে উঠবেনা, উঠলেও তা অর্থহীন হবে ।

৬.যে পর্যন্ত এ মাদ্রাসার আয়ের কোন নিশ্চিত উপায় অবলম্বিত না হবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল থাকলে ইনশা আল্লাহ সে পর্যন্ত এ মাদ্রাসা এভাবেই চলতে থাকবে। আর যদি আয়ের নিশ্চিত ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়, যেমন- জায়গীর (জায়গা জমি, জমিদারী) বা কারখানা, তেজারত বা কোন নির্ভরযোগ্য ধনী ব্যক্তির অলংঘনীয় ওয়াদা, তখন মনে হয় যে, যে আশা ও ভীতি আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার পুজি তা হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবী মদদ বন্ধ হয়ে যাবে। আর পরিচালকদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হবে ।

৭. সরকার এবং বিত্তবানদের অংশগ্রহণও অত্যধিক ক্ষতিকর মনে হচ্ছে।

৮.ঐ সকল লোকদের চাঁদা বরকতময় মনে হচ্ছে, যাঁরা নামের আশায় চাঁদা প্রদান করেন না। মোট কথা চাঁদাদাতাদের নেক নিয়্যতই প্রতিষ্ঠান অধিক স্থায়ী হবার পূজি বলে মনে করি ।

দাওরায়ে হাদীস স্বীকৃত আইন ২০১৮ এর সরকারি গেজেট

‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীসকে মার্স্টাস (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) ডিগ্রির সমমান বিল ২০১৮’

গত (৮ অক্টোবর) সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে  সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতি ০৮ অক্টেবর রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেন।

২০১৮ সালের ৪৮ নং আইনে এ সংক্রান্ত বিলটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়,  যেহেতু কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখিয়া দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরিয়া ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। সেহেতু এতদদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল-

১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন ও প্রয়োগ।—

(১) এই আইন “আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান আইন ২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

(৩) এই আইন সমগ্র বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হইবে।

২। সংজ্ঞা।— বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে,  এই আইনে

(১) “কওমি মাদরাসা” অর্থ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহীর শিক্ষাকেন্দ্র।

(২) “কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা” অর্থ:

(ক) ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ (একমাত্র আল্লাহর উপর নিরংকুশ ভরসা) এবং সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার রিযামন্দী ও সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের পরম ব্রত ও লক্ষ্য স্থির করিয়া একমাত্র আল্লাহ তাআলার সত্ত্বার সহিত ভয় ও আশার সম্পর্ক স্থাপন এবং তাহাতে অবিচল থাকা।

(খ) মহানবি হযরত মুহাম্মদ সা. এর বাণী “আমি ও আমার সাহাবীগণ যে মত, পথের উপর প্রতিষ্ঠিত)” এর আলোকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত এর মতাদর্শ অনুসরণে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের মাসুম (নিষ্পাপ) হওয়ার বিশ্বাস এবং সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের যথাযথ আজমত (মার্যাদা) ও তাঁহাদের ‘মিয়ারে হক’ (সত্যের মাপকাঠি) হওয়ার বিশ্বাস অন্তরে সুদৃঢ় করা ও তদনুসারে জীবন যাপন।

(গ) চার মাযহাবের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরমত সহিষ্ণুতার সহিত হানাফী মাযহাব অনুসরণ।

(ঘ) সুলুক ও আধ্যাত্মিকতায় সুপরিচিত চার তরীকা (চিশতিয়া, সোহরাওয়ারদিয়া, নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া ও কাদিরিয়া) সহ সকল হকপন্থী ধারার প্রতি সহনশীল ও উদার মনোভাব পোষণ।

(ঙ) উপমহাদেশে ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রদূত হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) এর চিন্তাধারার অনুসারী ও অনুগামী হযরত কাসেম নানুতবী (রহ.) ও হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ) প্রমুখ আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা-চেতনার অনুসরণ এবং তা’লীম তরবিয়াতসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি, আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ; এবং

(চ) আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত নেসাবে তা’লীম (পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি), শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, মাদরাসা পরিচালনা ইত্যাদিতে প্রভাবমুক্ত থাকিয়া স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা;

(৩) কো-চেয়ারম্যান” অর্থ আল-হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান।

(৪) “চেয়ারম্যান” অর্থ আল-হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান।

(৫) দাওয়াতে হাদিস (তাকমীল)” অর্থ কওমি মাদরাসার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান।

(৬) “বিধি” অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;

(৭) “সদস্য” অর্থ আল-হাইআতুল উলয়ার কোন সদস্য।

৩। আইনের প্রাধান্য।- আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।

৪। বোর্ড। ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন নিম্নবর্ণিত অনুর্ধ্ব ৬(ছয়) টি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থাকিবে, যথা :

(ক) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ;

(খ) বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ;

(গ) আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ;

(ঘ) আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ;

(ঙ) তানযীমূল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ; এবং

(চ) জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ।

৫। আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যালয়। আল-হাইআতুল উলয়ার প্রধান কার্যালয় থাকিবে ঢাকায় এবং প্রয়োজনে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে উহার আঞ্চলিক বা শাখা কার্যালয় স্থাপন করা যাইবে।

৬। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর কমিটি।— (১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৩-০৪-২০১৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখে ৩৭.০০.০০০০.১১৮.২০.০০৫.১৭-১২১ নম্বর স্মারকমূলে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের আলােকে ‘আলআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর নিম্নরূপ একটি কমিটি থাকিবে, যথা :

(ক) চেয়ারম্যান: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি (পদাধিকার বলে);

(খ) কো-চেয়ারম্যান: সিনিয়র সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (পদাধিকার বলে);

(গ) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর ৫ (পাঁচ) জন সদস্য (পদাধিকার বলে মহাসচিসহ অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত);

(ঘ) বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকারবলে সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত);

(ঙ) আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকার বলে সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বাের্ড কর্তৃক মনোনীত);

(চ) আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকার বলে
সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত);

(২) তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকার বলে
সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত); এবং

(জ) জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকার বলে
সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত)।

(২) চেয়ারম্যান প্রয়োজনে, যে কোনো সংখ্যক সদস্যকে কমিটিতে কো-অপট করিতে পারিবেন; তবে উক্ত সংখ্যা ১৫ (পনেরো) জনের অধিক হইবে না ।

(৩) অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম পূর্ণ হইবে।

(৪) দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র পণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরীসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কমিটি এক বা একাধিক উপ-কমিটি গঠন করিতে পারিবে ।

(৫) কমিটি স্থায়ী কমিটি বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং উহা দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকিবে।

৭। দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান। -শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৩-০৪-২০১৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখের ৩৭.০০.০০০০.১১৮.২০.০০৫.১৭-১২১ নম্বর স্মারকমূলে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট বজায় রাখিয়া ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরিয়া গঠিত আল হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান এমনভাবে প্রদান করা হইল যেন উহা এই আইনের অধীন প্রদান করা হইয়াছে।

৮। শিক্ষা কার্যক্রম।—ধারা ৪ এ উল্লিখিত ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন বোর্ডসমূহ ধারা ৬ এ উল্লিখিত কমিটি দ্বারা নিবন্ধিত কওমি মাদরাসাসমূহে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসাব (পাঠ্যসচি) অনুসারে দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হইবে।

৯। আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর কমিটির কার্যাবলি। —(১) ধারা| ৬ এ উল্লিখিত কমিটি নিম্নরূপ দায়িত্ব পালন করিবে, যথা :

(ক) কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) সনদের শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ;

(খ) দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) সনদ বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত
গ্রহণ;

(গ) দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর পরীক্ষা গ্রহণ ও তত্ত্বাবধান; এবং

(ঘ) দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষার সময়
নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং ফলাফল ও সনদ তৈরীসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা।

(২) কমিটি উহার কার্যক্রম সম্পর্কে, সময় সময়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করিবে।

১০। বিধি ও সংবিধি প্রণয়ন— এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই আইনে উল্লিখিত যে কোন বিষয়ে কমিটি কর্তৃক বিধি ও সংবিধি প্রণয়ন করা যাইবে।

উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসা সদনের সরকারি স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিলে গণভবনে এই স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে কওমি মাদরাসা সনদের আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

পরিশিষ্ট-১ দারুল উলুম দেওবন্দের দস্তুরুল আমল; এলহামী উছুলে হাশ্তগানা

উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনী মারকাজ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত দারুল উলূম দেওবন্দ পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আট দফা মূলনীতি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছিল এবং যা উছুলে হাশতগানা নামে পরিচিত। উক্ত আট দফা মূলনীতি এখানে লিপিবদ্ধ করা গেল।

১.মাদ্রাসার আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করার প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে গভীর দৃষ্টি রাখতে হবে । নিজে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবেন এবং অন্যান্যদের দ্বারাও চেষ্টা চালাবেন। মাদ্রাসার হিতাকাংখীগণকেও এ কথাটি সর্বদা মনে রাখতে হবে।

২.ছাত্রদের খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে বরং ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে মাদ্রাসা হিতাকাংখীগণকে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।

৩.মাদ্রাসার পরামর্শদাতাগণকে (কর্তৃপক্ষকে) সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে, যাতে মাদ্রাসার পরিচালনা ব্যবস্থা সুন্দর, সুখ ও নিয়মতান্ত্রিক হয়। নিজের মতকে ঠিক রাখার জন্য যেন বাড়াবাড়ি করা না হয়। আল্লাহ না করুন, যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যে- আপন মতের বিপরীত মত গ্রহণ বা পরামর্শ গ্রহণের মত সহনশীলতা পরামর্শদাতাগণের থাকবে না, তখন এ মাদ্রাসার বুনিয়াদ টলমল হয়ে পড়বে ।

মোট কথাঅন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পরামর্শ দেবার সময় এবং তার আগে পরেও মাদ্রাসার সুব্যবস্থা ও সুশৃংখলার প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে । আর কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয় যেন পরামর্শদাতাগণ মতামত প্রকাশে কোন প্রকার দ্বিধাগ্রস্থ না হয়ে পড়েন। আর উপস্থিত শ্রোতাগণও যেন তা ধৈর্য ও নেক নিয়্যতের সাথে শ্রবণ করেন ।

অর্থাৎ এরূপ খেয়াল রাখতে হবে যে অন্যের কথা যদি বুঝে আসে- তা আমাদের মতের বিপরীতই হউক না কেন- অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মেনে নিব ।

এবং এ কারণেও এটা জরুরী যে, মুহতামিম সাহেব সর্বদা পরামর্শ সাপেক্ষে কার্যাবলীর ব্যাপারে যোগ্য পরামর্শদাতাদের থেকে অবশ্যই পরামর্শ গ্রহণ করবেন, তাঁরা মাদ্রাসার নিয়মিত পরামর্শদাতা হ’ন অথবা ইলম ও অভিজ্ঞতার অধিকারী এবং মাদ্রাসার হিতাকাংখী কোন আগন্তুকই হন। এবং এ কারণেও জরুরী যে, যদি ঘটনাক্রমে কোন কারণে পরামর্শদাতাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ না ঘটে এবং যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিবর্গের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তখন কেউ শুধু এ অজুহাতে যেন অসন্তুষ্ট না হন যে, আমাকে কেন জিজ্ঞেস করা হ’ল না। অবশ্য মুহতামিম সাহেব যদি কাউকেই জিজ্ঞেস করে না থাকেন তখন অবশ্য পরামর্শদাতাগণ আপত্তি তুলতে পারেন।

৪.মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দের সমমনা হওয়া একান্ত আবশ্যক যেন দুনিয়াদার আলেমদের ন্যায় অহংকারী এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্নকারী না হন । আল্লাহ না করুন যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তখন এ মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে ।

৫.পূর্ব নির্ধারিত দরস বা পরে পরামর্শক্রমে যা স্থির হয়, যথা সময়ে তা সমাপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নচেৎ এ মাদ্রাসা জমে উঠবেনা, উঠলেও তা অর্থহীন হবে ।

৬.যে পর্যন্ত এ মাদ্রাসার আয়ের কোন নিশ্চিত উপায় অবলম্বিত না হবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল থাকলে ইনশা আল্লাহ সে পর্যন্ত এ মাদ্রাসা এভাবেই চলতে থাকবে। আর যদি আয়ের নিশ্চিত ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়, যেমন- জায়গীর (জায়গা জমি, জমিদারী) বা কারখানা, তেজারত বা কোন নির্ভরযোগ্য ধনী ব্যক্তির অলংঘনীয় ওয়াদা, তখন মনে হয় যে, যে আশা ও ভীতি আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার পুজি তা হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবী মদদ বন্ধ হয়ে যাবে। আর পরিচালকদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হবে ।

৭. সরকার এবং বিত্তবানদের অংশগ্রহণও অত্যধিক ক্ষতিকর মনে হচ্ছে।

৮.ঐ সকল লোকদের চাঁদা বরকতময় মনে হচ্ছে, যাঁরা নামের আশায় চাঁদা প্রদান করেন না। মোট কথা চাঁদাদাতাদের নেক নিয়্যতই প্রতিষ্ঠান অধিক স্থায়ী হবার পূজি বলে মনে করি ।

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস বাংলাদেশ-এর সংবিধান

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস, বাংলাদেশভুক্ত মাদ্রাসাসমূহ পরিচালনার নিমিত্তে আঞ্জুমান কর্তৃক ঘোষিত অত্র পথনির্দেশিকা, নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধানসমূহের নাম হবে “দস্তুরুল মাদারিস আল-ইসলামিয়্যাহ আল-আহলিয়্যাহ, বাংলাদেশ”। বাংলায় এটাকে “কাওমী মাদ্রাসা সংবিধান” বলা যেতে পারবে ।

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মদারিস -এর ১৭/৬/১৩ হি. মোতাবেক ১২/১২/৯২ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত মজলিসে শো’রার সাধারণ অধিবেশনে অত্র দস্তুর অনুমোদন লাভ করার সময় থেকে এর কার্যকরীকরণের তারিখ গণ্য হবে। এর কার্যকরীকরণের সাথে সাথে আঞ্জুমানের পূর্বের যাবতীয় দস্তুরুল মাদারিস রহিত গণ্য হবে।

অত্র দস্তুরের অনুসরণ সকল মাদ্রাসার জন্য অপরিহার্য হবে।

(ক) শিক্ষার্থীদেরকে যাবতীয় ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তোলা।

(খ) ধর্মীয় জ্ঞান লাভে অপরিহার্য বিষয়গুলো শিক্ষাদান করা।

(গ) জনসাধারণের মাঝে ইসলামী জ্ঞান ও চিন্তাধারার প্রটার ও প্রসারে আবশ্যকীয় বিষয় ও ভাষাসমূহ শিক্ষাদান এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী অনুরূপ বিষয় নির্বাচন করা।

(ঘ) সুন্নাতের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী রূপে আদর্শ মানুষ সৃষ্টি করা।

(ঙ) পাশ্চাত্য শিক্ষা-দীক্ষা ও বিজাতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি থেকে মুক্ত এমন একটি আদর্শ জামাত গড়ে তোলা যা সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলীতে গুণান্বিত হবে এবং সমাজের সর্বস্তরে দ্বীন কায়েম এবং বাতিলকে প্রতিহত করার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

(চ) শিক্ষার্থীদেরকে আকাবেরে দেওবন্দের অনুরূপ প্রতিভা ও চরিত্রের অধিকারী করে সমাজে আদর্শ ব্যক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করা।

(ক) উপরোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের নিমিত্ত সার্বিক প্রচেষ্টা চালানো।

(খ) দ্বীনের হেফাজতের নিমিত্ত বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারার ব্যাপক প্রচার-প্রসারের সাথে সাথে বিভিন্ন উপায়ে বাতিল মতবাদ ও যাবতীয় কুসংস্কার যথাসাধ্য মোকাবেলা করে যাওয়া।

(গ) সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম জনসাধারণকে ধ্বংসাতক মিশনারী তৎপরতার কবল থেকে রক্ষা করা।

(ঘ) বাতিল সম্প্রদায়গুলোর অপপ্রচার রোধকল্পে আহলে সুন্নাত ওয়াল-জমাত, বিশেষতঃ আকাবেরে দেওবন্দের লিখিত পুস্তক-পুস্তিকার ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন স্থানে দ্বীনী পাঠাগার চালু করার চেষ্টা করা।

(ঙ) আঞ্জুমান কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচী, নীতি-পদ্ধতি, নেসাবে তালীম, তরীকে তালীম ও মারকাজী পরীক্ষা-কর্মসূচী অনুসরণ ও কার্যকরী করণ ।

(ক) আঞ্জুমানভুক্ত সকল মাদ্রাসার আদর্শ ও চিন্তাধারা হবে আহলে-সুন্নাত ওয়াল-জমাতের আদর্শ ও চিন্তাধারার অনুসারী।

(খ) মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলতঃ দারুল উলুম দেওবন্দই হবে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।

(গ) মাদ্রাসা শিক্ষার অতীত গৌরব ও ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে এবং দ্বীনী শিক্ষার নিজস্ব ভাবধারা ও স্বকীয় মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে সরকারী নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকা।

(ঘ) সকল ছাত্র-শিক্ষক প্রতিটি আচরণে, লেবাসে-পোশাকে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে সলফে-সালেহীনের অনুসরণ করা।

(ঙ) মাদ্রাসার পরিচালক, শিক্ষকবৃন্দ, কর্মচারীগণ এবং সকল ছাত্র উপরোল্লিখিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শের অনুসারী হওয়া অপরিহার্য হবে।

(ক) মাদ্রাসাসমূহের পরিচালকদের পরিচিতি সদর মুহতামি, মুহতামিম, নির্বাহী মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম, মুঈনে মুহতামিম ইত্যাদি হবে।

(খ) বিভাগীয় পরিচালকের পরিচিতি নাজেমে তালীমাত, নাজেমে দারুত্তোলবা এবং নাজেমে শোবায়ে তাফসীর প্রভৃতি ভাষায় হবে।

(গ) স্কুল-কলেজ ও সরকারী মাদ্রাসাসমূহের ব্যবহৃত ভাষা সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয় ।

(ক) আঞ্জুমানভূক্ত মাদ্রাসাসমূহ পরিচালনার নিমিত্ত দু’টি মজলিস থাকবে। এক- মজলিসে শোরা ও দুই- মজলিসে আমেলা।

(খ) প্রয়োজনবোধে এলাকার মাদ্রাসা হিতাকাঙ্খিদের সমন্বয়ে একটি মজলিসে এমদাদী থাকতে পারবে।

(ক) আঞ্জুমানের সাধারণ সম্পাদকের মনোনয়ন ও সুপারিশে আঞ্জুমানের সভাপতি আঞ্জুমানভুক্ত মাদ্রাসাসমূহের মজলিসে শোরায় অনুমোদন দান করবেন।

সভাপতির অনুপস্থিতিতে সহসভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক অনুমোদন দান করতে পারবেন।

খ) প্রতিটি মাদ্রাসার নিকটবর্তী কাওমী মাদ্রাসাসমূহের মুহতামিমগণ এবং স্থানীয় আদর্শ, সুন্নাতের পাবন্দ, বিদআতমুক্ত ও মাদ্রাসার হিতাকাংখী ওলামাদের মধ্য থেকে শোরর সদস্য মনোনয়ন করা হবে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে স্বল্প সংখ্যক গাইরে আলেম সদস্য নেয়া যাবে।

(গ) মজলিসে শোরা একটি স্থায়ী মজলিস হিসাবে পরিগণিত হবে। তবে আঞ্জুমান কর্মকর্তাগণ প্রয়োজনে এর পূণর্গঠন করতে পারবেন। এতে কোন কারণ প্রকাশ্যে বর্ণনা করা আবশ্যকীয় হবে না।

ঘ) মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা মাদ্রাসার মান অনুসারে অনূন ১১ জন ও অনুগ্ধ ২৫ জন হতে পারবে।

ক) বছরে অন্ততঃ একবার  শোরার সাধারণ অধিবেশন আহববান করতে হবে। জরুরী অধিবেশন প্রয়োজনানুসারে আহব্বান করা যাবে।

খ) মাদ্রাসার মুহতামিম শোরার সম্পাদক হিসাবে সাধারণ ও জরুরী অধিবেশন আহব্বান করবেন।

গ) সাধারণ অধিবেশনের দাওয়াতনামা অন্যূন এক সপ্তাহ পূবে এবং জরুরী অধিবেশনের দাওয়াতনামা অন্যূন ২৪ ঘন্টা পূবে পৌছাতে হবে।

ঘ) দাওয়াতনামায় বিস্তারিত আলোচ্য বিষয় লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।

ঙ) জরুরী অধিবেশনের ক্ষেত্রেও একাধিক আলোচ্য বিষয় থাকতে পারবে।

চ) শোরার অধিবশনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত পৃথক রেজিস্টারে ক্রমিক নম্বর সহকারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

ছ) শোরার প্রতিটি অধিবেশনে বিগত অধিবেশনের সিদ্ধান্ত পাঠ করে অনুমোদন লাভ করতে হবে।

জ) অধিবেশনে যে কোন সিদ্ধান্ত সকলের রায় শোনার পর অধিবেশনের সভাপতির রায়ে গৃহীত হবে। উপস্তিত অধিকাংশ সদস্যের রায়ের ভিত্তিতে সভাপতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যদি কোন বিষয়ে দু’ পক্ষের রায় সমান হয় তবে সভাপতি নিজ ক্ষমতায় কোন একটিকে গ্রহণ করবেন।

ঝ) শোরার সভাপতি সাধারণ ও জরুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে উপস্থিত সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি মনোনীত করা যাবে।

ঞ) শোরার সাধারণ অধিবেশনে মাদ্রাসার তালীমাত তরবিয়ত হিসাব নিকাশ প্রশাসন প্রভৃতি আলোচ্য বিষয় হিসাবে থাকা অপরিহায।

ঠ) শোরার রেজিস্টারে যেখানে অধিবেশনের সিদ্ধান্ত সমূহ লিপিবদ্ধ করা হবে। তথায় উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষর থাকা জরুরী হবে।

ড) সিদ্ধান্ত সমূহের শেষে অধিবেশনের সভাপতির স্বাক্ষর থাকা অপরিহায।

ক) মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মজলিসে শোরা সবোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী গণ্য হবে।

খ) দস্তুরের আলোকে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন ও কমসূচী প্রণয়ন করতে পারবে।

গ) মাদ্রাসার পূবোল্লিখিত আদশ,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ বাস্তবায়িত করবে এবং প্রয়োজনীয় বিভাগ প্রবতন উপ পরিষধ গঠন ও এগুলির দায়িত্ব সীমা নিদ্ধারণ করবে।

ঘ) সদর মুহতামিম মুহতামিম নিবাহী মুহতামিম নায়েব মুঈন শিক্ষক ও কমচারী নিয়োগ এবং তাদের অপসারণ পদোন্নতি ও পদাবনতি বেতন নিধারণ পদমযাদা দায়িত্ব ও অধিকারসমূহ নিধারণ এবং প্রয়োজন নতুন পদ সৃষ্টি বা বিলুপ্তি সাধন করবে। বিশেষতঃ নাজেমে তালীমাত নাজেমে দারুত্তোলা ও বিভাগীয় নাজেম নিয়োগ করবে।

তাবে নিয়োগ বরখাস্তের ক্ষেত্রে আঞ্জুমান কমকতাদের অনুমোদন লাভ করতে হবে। কিন্তষদু নি¤œ বেতনভোগী কমচারী ক্ষেত্রে নয়।

ঙ) মজলিসে আমেলা বা উপ পরিষদসমূহের সুপারিশমালা পযালোচনা করে তা অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

চ) মাদ্রাসার স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকী করবে।

ছ) বাষিক আয় ব্যয়ের বাজেট ও হিসাব অনুমোদন করবে এবং হিসাবের জন্য অডিটর নিয়োগ করবে।

জ) মাদ্রাসার উন্নয়ন কল্পে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ঝ) কোন সময় কোন মাদ্রাসার অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে মজলিসে শোরা আঞ্জুমানের সাহায্য কামনা করবে।

ঞ) প্রয়োজনে মুহতামিম ও নিবাহী মুহতামিম সাহেবকে যে কোন ব্যাপারে ক্ষমতা অপণ করবে।

ট) মাদ্রাসার নামে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নিবে এবং  তার পরিচালক নিয়োগ করবে।

ঠ) মজলিসে আমেলা গঠন করবে। তবে আঞ্জুমানের অনুমোদন লাভ করতে হবে।

ক) মজলিসে শোরা ই আমেলা গঠন করবে। তবে আঞ্জুমানের অনুমোদন লাভ করতে হবে।

খ) মজলিসে আমেলার সকল সদস্য  শোরার সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত করা হবে।

গ) মজলিসে আমেলার সদস্য সংখ্যা অন্যূন ৫ জন ও অনূদ্ধ ৯ জন হবে।

ঘ) মাদ্রাসার মুহতামিম ও নাজেমে তালীমাত আমেলার সদস্য থাকবেন।

ঙ) মুহতামিম পদাধিকার বলে আমেলার সম্পাদক থাকবেন।

চ) আমেলার কোন স্থায়ী সভাপতি থাকবেন না। অধিবেশন চলাকালে একজনকে সভাপতি করে নিতে হবে।

ছ) মজলিসে আমেলা স্থায়ী পরিষদ হিসাবে গণ্য হবে। তবে শোরা বিশেষ পরিস্থিতিতে তার পুনর্গঠন করতে পারবে।

ক) মজলিসে শোরা কতৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়িত করবে।

খ) মাদরাসা শিক্ষার আদশ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কল্পে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করত : মজলিসে শোরার অধিবেশনে পেশ করবে।

গ) আঞ্জুমান কতৃক প্রদত্ত নিদেশাবরি বাস্তবায়নের রূপরেখা শোরার বিবেচনার জন্য পেশ করবে এবং অনুমোদনের পর নিদিষ্ট রূপরেখা বাস্তবায়িত করবে।

ঘ) মজলিসে শোরার অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষক কমচারী নিয়োগ অপসারণ পদোন্নতি বা পদাবনতি করতে পারবে। তবে শিক্ষক কমচারী নিয়োগ বরখাস্তের ক্ষেত্রে আঞ্জুমানের কমকাতাদের পরামশ নেয়া জরুরী হবে। কিন্তু আমেলা নি¤œ বেতন ভোগী কমচারীদেরকে শোরা ছাড়ায় নিয়োগ বরখাস্ত করতে পারবে।

ঙ) বিশেষ প্রয়োজনে শোরা অধিবেশনে অনুমোদিত বাজেট বহিভূত ব্যয় অনুমোদন করতে পারবে, তবে শোরার পরবতী অধিবেশনে তার অনুমোদন লাভ করতে হবে।

চ) মজলিসে শোরায় পেশ করার জন্য বাজেট প্রণয়ন করবে।

ছ) শোরা অডিটর নিয়োগ না করে থাকলে আমেলা অডিটর নিয়োগ করতে পারবে।

জ) মাদরাসার প্রশাসন ও বিভাগীয় কাযাবলি তদারকি করবে এবং শোরায় রিপোট পেশ করবে।

ঝ) শিক্ষকদের আবেদন সমূহ বিবেচনা করে শোরার নিকট সুপারিশ করবে।

ঞ) নাজেমে তালিমাত নাজেমে দারুত্তোলবা ও বিভাগীয় নাজেম নিয়োগ করবে তবে শোরা এদের নিয়োগ করে থাকলে তাই বাস্ততবায়িত করবে।

ট) প্রয়োজনে মোহতামিম সাহেবকে যেকোন ব্যপারে ক্ষমতা অপণ করতে পারবে।

ঠ) প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ও অপারেটর মনোনীত করতে পারবে তবে শোরার সিদ্ধান্তের পরিপন্থী না হওয়া জরুরী।

ক) মজলিসে আমেলার অধিবেশন প্রয়োজনে বরাংবার হতে পারবে তবে কমপক্ষে বছরে তিন বার হওয়া জরুরী হবে।

খ) মজলিসে আমেলার সাধারণ অধিবেশন ৩দিনের নোটিশে ও জরুরী সভা ২৪ঘন্টার নোটিশে আহব্বান করা যাবে।

গ) মুহতামিম সম্পাদক হিসাবে আমেলা অধিবেশন আহব্বান করবেন।

ঘ) ১০/ঘ, ১০/ ঙ, ১০/চ, ১০/ছ, ১০/জ, ১০/ট, ১০/ঠ, ও ১০/ড অনুসরণ করতে হবে।

ঙ) আমেলার সদস্যদের অধিকাংশের উপস্থিতিতে কোরাম পরিপূণ হবে।

ক) কোন সদস্যের ইন্তিকাল হলে।

খ) কোন সদস্য শোরা বা আমেলার তিনটি অধিবেশনে এক নাগাদ অনুপস্থিত থাকলে এবং শোরা কতৃক অত্র সদস্যের পদকে শূন্য বলে ঘোষণা করা হলে।

গ) কোন সদস্য পদত্যাগ করলে। এবং

ঘ) কোন সদস্য মাদ্রাসার আদশ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যের বরখেরাফ কমকান্ডে জড়িত বলে প্রমাণিত হলে- মজলিসে শোরা তার সদস্যপদ বাতিল ঘোষনা করে মনোনয়নের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করবে। তবে আঞ্জুমানের অনুমোদন জরুরী হবে।

ক) এমদাদী কমিটি শোরার অনুমোদনের মাধ্যমে গঠিত হবে। এ কমিঠি শোরা আমেলার সিদ্ধান্ত অনুসারে এবং মুহতামিমের আহব্বানে মাদ্রাসায় সাহায্য করে যাবে। এর সদস্য সংখ্যা সীমিত নয়। মাদ্রাসার সকল হিতাকাংখী এর সদস্য হতে পারবে। অত্র কমিটি মাদ্রাসার উন্নয়নের লক্ষ্যে শোরা বরাবর যে কোন সুপারিশ দাখিল করতে পারবে।

খ) মাদ্রাসার মুহতামিম অত্র কমিটির আহব্বায়ক থাকবেন।

ক) মুহতামিম বা নিবাহী মুহতামিম হক্কানী আলেম, মুত্তাকী, আমানতদার, চিন্তাশীল, ত্যাগী, প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী এবং মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় অথ সংগ্রের যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে।

খ) তিনি মাদ্রাসার আদশ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে ঐক্যমত পোষণকারী হওয়া জরুরী।

গ) মুহতামিম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হওয়া অপরিহায।

ক) মুহতামিম মাদ্রাসার যাবতীয় কাযাবলী প্রত্যক্ষ পরিচালনা শৃঙ্খলা বিধান ও নিয়ন্ত্রণ করবেন।

খ) মজলিসে শোরা ও আমেলার সবপ্রকার অধিবেশন আহব্বান করবেন।

গ) মাদ্রাসার সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দস্তখত, রসিদ বহিতে দস্তখত এবং ভাউচার অনুমোদন করবেন।

ঘ) অধিবেশনসূহের কাযবিরনী লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করবেন।

ঙ) প্রয়োজনে শিক্ষক কমচারীদের নিকট থেকে কৈফিয়ত তলব ও তাদেরকে সতক করবেন। প্রয়োজনে তাদেরকে সাময়িক অব্যহতি দান করতে পারবেন।

চ) নৈমিত্তিক খরচের জন্য শোরা আমেলা কতৃক অনুমোদিত পরিমাণ অথ মাদ্রাসার মুহাসিবের কাছে জমা রাখতে পারবেন।

ছ) মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং লেখাপড়ার পরিবেশ সুষ্ট রাখার স্বাথে মাদ্রাসাকে দলীয় রাজনৈতিক কাযকলাপ মুক্ত রাখবেন। অনুরুপভাবে ছাত্রদেরকেও দলীয় রাজনৈতিক সংগঠন তথা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন থেকে মুক্ত রাখবেন।

জ) প্রয়োজনে তিনি মাদ্রাসার কোন কাজের দায়িত্ব কোন শিক্ষকের উপর অপণ করতে পারবে।

ঝ) মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের অডিট করার পর অনুমোদনের জন্য শোরার নিকট পেশ করবেন।

ঞ) মজলিসে আমেলার অনুমোদন সাপেক্ষে নিম্ন বেতনভোগী কমচারীদের নিয়োগ বরখাস্ত করতে পারবেন।

ট) মাদ্রাসার আদশ ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বরখেলাফ আচরণকারী ছাত্রকে বহিস্কারযোগ্য মনে হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে পরামশক্রমে বহিস্কার করতে পারবে।

ঠ) মাদ্রাসার ছুটি ঘোষণা, ছাত্রদের ভতির মঞ্জুরী খোরাকী মঞ্জুরী সনদ ও অনুমতিপত্র প্রদান এবং শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করবেন।

ড) তিনি শোরা বা আমেলার অনুমোদনে নাজেমে তালীমাত , নাজেমে দারুত্তোলবা ও বিভাগীয় নাজেম নিয়োগ করবেন।

ঢ) আমেলার পরামশক্রমে শোরা ও আঞ্জুমানের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনবোধ শিক্ষক কমচারী নিয়োগ বা তাদেরকে বরখাস্ত করতে পারবেন।

ণ) শিক্ষক কমচারীদের ছুটি মঞ্জুর করবেন।

ত) তালীমাতের রিপোট অবগত হয়ে ছাত্রদেরকে ৫দিনের অধিক ছুটি মঞ্জুর করবেন।

থ) আথিক বছরের শেষে মাদ্রাসার বাষিক রিপোট তৈরী করবেন।

দ) তিনি শোরা আমেলা ও আঞ্জুমানের নিকট জবাবদেহ করবেন।

ধ) প্রয়োজনে মাদ্রাসায় নিবাহী মুহতামিমের পদ সৃষ্টি করা যাবে। তখন নিবাহী মুহতামিম মাদ্রাসার নিবাহী কমকতা হবেন এবং মুহতামিম তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করবেন। নিবাহী মুহতামিম যে কোন গুরুত্বপূণ বিষয়ে মুহতামিমের পরামশ নিবেন।

প্রতিটি মাদ্রাসায় সদর মুহতামিম থাকা জরুরী নয়। তবে শোরা যদি বিশেষ কারণে এ পদ সৃষ্টি করে তবে তিনিঃ-

ক) মুহতামিমের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

খ) তিনি কোন কাযনিবাহী ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হবেন না।

গ) তবে, শোরা-আমেলা কতৃক তাকে বিশেষ কোন দায়িত্ব বা ক্ষমতা অপণ করা হলে তিনি তার অধিকারী হবেন। তখন তিনি শোরা আমেলার নিকট জবাবদেহ থাকবেন।

ক) প্রতিটি মাদ্রাসায় নায়েব ও মুঈনে মুহতামিম থাকা জরুরী নয়।

খ) নায়েব ও মুঈনে মুহতামিমের দায়িত্ব ও ক্ষমতা তা-ই হবে যা মুহতামিম বা নিবাহী মুহতামিম তাদেরকে অপণ করবেন।

গ) মুহতামিমের বা নিবাহী মুহতামিমের দীঘকাল অবতমানে নায়েব মুহতামিম আর নায়েবে মুহতামিম পদ না থাকলে মুঈনে মুহতামিম মুহতামিম বা নিবাহী মুহতামিমের দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হবেন। তবে কোন শিক্ষক কমচারী নিয়োগ অপসারণ করতে পারবেন না।

ঘ) মুহতামিম বা নিবাহী মুহতামিম উপস্থিত থাকা কালে বা অল্প সময়ের জন্য মাদ্রাসার বাইরে থাকা কালে নায়েব ও মুঈনে মুহতামিম মুহতামিম বা নিবাহী মুহতামিম কতৃক প্রাপ্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন না।

ঙ) যদি শোরা বা আমেলা মুহতামিমের বা নিবাহী মুহতামিমের দীঘকালীন অনুপস্থিতিকালে নায়েব ও মুঈন ছাড়া অন্য কাউকে দায়িত্ব অপণ করে তবে তিনিই কায পরিচালনা করবেন।

চ) নায়েব ও মুঈনে মুহতামিম মুহতামিম , নিবাহী মুহতামিম এবং শোরা ও আমেলার নিকট জবাবদেহ থাকবেন।

ক) মাদ্রাসার নাজেমে তালীমাত মাদ্রাসার আদশ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেসমূহের অনুসারী , দ্বীনি জ্ঞানসমূহে পারদশী, তাকওয়া ও দ্বীদারীতে সমস্ত শিক্ষকের উদ্ধে, প্রভাব সম্পন্ন ও সুষ্টু মতামতের অধিকারী, অত্র বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষার যোগ্যতা সম্পন্ন বিনয়ী ও কমতৎপরতা এবং মাদ্রাসার হিতাকাংখী হওয়া অপরিহায।

খ) তিনি মজলিসে এলমীর তত্ত্বাবধানে তালীমাতের সবোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি হবেন।

গ) মাদ্রাসার শিক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের তত্ত্বাবধান করবেন।

ঘ) নতুন ছাত্রদের ভতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তার ভিত্তিতে তাদের ভতি করা বা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

আর পুরাতন ছাত্রদের পরীক্ষার ফলাফল দেখে তাদের তারাক্কী দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত দিবেন।

ঙ) আঞ্জুমান কতৃক প্রদত্ত নেছাব মোতাবেক শিক্ষা চালু করবেন।

চ) শিক্ষাবষের শুরুতে মজলিসে এলমীর পরামশে শিক্ষকদের সবকের রুটিন করবেন বা প্রয়োজনে তাতে রদবদল করবেন।

ছ) সাময়িক এবং বাষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন এবং পরীক্ষার ফলাফল যথাসময়ে নিদিষ্ট রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করে তা ঘোষণা করবেন। পুরস্কারের মান নিদ্ধারণ করবেন। অধিকন্ত অকৃতকায ছাত্রদের তালিকা তৈরী করে মুহতামিমের নিকট পেশ করবেন। যাতে প্রয়োজনীয় নিদেশ জারী করা যায়।

জ) প্রতি কিতাবের নেছাব পরিমাণ পাঠ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিবেন।

ঝ) ছাত্রদের অনুদ্ধ ৫দিন ছুটি মঞ্জুর করবেন।

ঞ) তালীমের জন্য নিধারিত সময়ে ছাত্র শিক্ষকদের উপস্থিতি তদারকী করবেন এবং অনুপস্থিতির রিপোট তৈরি করবেন।

ট) শিক্ষকদের সাধারণ অবহেলার জন্য উপযোগী সতকতা প্রদান করবেন এবং মারাত্মক ক্রটি ও অবহেলার ক্ষেত্রে মুহতামিমকে রিপোট পেশ করবেন। আর ছাত্রদের অশুভ আচরণের জন্য তাদেরকে বহিস্কার ছাড়া সবপ্রকার সতকতার ও শাস্তির পদক্ষেপ নিবেন।

ঠ) তালীমাতের কাযক্রমের রিপোট মজলিসে এলমী আমেলা ও শোরা অধিবেশনে পেশ করবেন।

ড) ছাত্রদের লেখাপড়ার তৎপরতা এবং আমল আখলাকের তদারকী করবেন। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজ নছীহতের মাধ্যমে তাদের তরবীয়ত জারী রাখবেন। আর চরিত্র বিধ্বংসী কাজের জন্য তাদের সংশোধন ব্যবস্থা নিবেন।

ঢ) যে সকল ছাত্র মাদ্রাসার নিয়ম কানুন আদশ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেসমূহের বরখেলাফ আচরণে লিপ্ত হবে বা লেখা পড়ার কাজে মারাত্মক অবহেলা করবে বা ঝগড়া বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বা মাদ্রাসা কতৃপক্ষ অথবা শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করবে বা সুন্নত বিরোধী কাজ করবে বা চরিত্রহীন সাব্যস্ত হবে তাদের বহিস্কার যোগ্য হওয়ার রিপোট মুহতামিমকে পেশ করবেন।

ণ) ছাত্রদের বিনামূল্যে খোরাকী জারী করা বা আংশিক খোরাকী জারী করার জন্য মুহতামিমকে সুপারিশ করবেন।

ত) তিনি ভতির সময় ছাত্রদের লেবাস, পোষাক, চুল, দাড়ির অবস্থা ও অন্যান্য বিষয় যাচাই করবেন এবং মাদ্রাসার যাবতীয় নিয়ম কানুন মেনে চলার জন্য লিখিত ওয়াদা নিবেন।

থ) মজলিসে এলমী তালীমাতের মূল তত্ত্বাবধায়ক বিধায় নাজেমে তালীমাত ও মজলিসে পরামশ ও সিদ্ধান্তগুলো অপরিহাযরূপে অনুসরণ করে চলবেন। অধিকন্তু সবক্ষেত্রে মুহতামিমের প্রতি অনুগত থাকবেন।

দ) তিনি শোরা, আমেলা মজলিসে এলমী ও মুহতামিমের নিকট জবাবদেহ থাকবেন।

ক) মাদ্রাসার শোরা মাদ্রাসার শিক্ষা বিভাগের সুষ্ঠুপরিচালনা ও তদারকীর জন্য অন্যূন ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মজলিসে এলমী গঠন করে দিবে।

খ) মাদ্রাসার মুহতামিম ও নাজেমে তালীমাত পদাধিকার বলে এ মজলিসের সদস্য থাকবেন।

গ) নাজেমে তালীমাত এ মজলিসের আহবায়ক থাকবেন।

ঘ) এ মজলিস শিক্ষকদের সবকের রুটিন তৈরী করবে এবং প্রয়োজনে রুটিন রদবদল করবে।

ঙ) তালীমাতের বিভিন্ন বিষয়ে নীতি নিধারণ এবং নিয়ম কানুন প্রণয়ন করবে এবং এগুলোর বাস্তবায়ন তদারকী করবে।

চ) তালীমাতের যাবতীয় কাযক্রম তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করবে।

ছ) নাজেমে তালীমাতকে কাযে অবহেলা বা তালীমাতের অনিয়মের জন্য সতক করবে।

জ) শোরাকে নাজেমে তালীমাত নিযুক্তির ক্ষেত্রে পরামশ বা প্রয়োজনে নাজেম রদ বদলের প্রস্তাব পেশ করবে।

ঝ) মজলিসে এলমী শোরার নিকট জবাবদেহ থাকবে।

ক) ছাত্রাবাসে অবস্থানরত ছাত্রদের থাকার শৃঙ্খলা বিধান করবেন।

খ) ছাত্রাবাসের নিয়ম কানুনের ভিত্তিতে তাদেরকে পূণ নিয়ন্ত্রণ করবেন।

গ) তাদের লেবাস পোষাক গতিবিধি আমল আখলাক এবং লেখা পড়ার তদারকী করবেন।

ঘ) ছাত্রাবাসের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ঙ) নিধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়ে ছাত্রাবাসের বাইরে যাওয়ার জন্য কোন ছাত্র অনুমতি প্রাথনা করলে তা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

চ) ছাত্রাবাসে অবস্থানরত ছাত্রদের বিচার করবেন।

ছ) কোন ছাত্র বহিস্কারযোগ্য বিবেচিত হলে মুহতামিমকে তার অপরাধের রিপোট পেশ করবেন।

জ) তিনি মুহতামিম ও মজলিসে আমেলার নিকট জবাবদেহ থাকবেন।

ক) মাদ্রাসার শিক্ষক কমচারীগণ মাদ্রাসার আদশ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনুসারী এবং তা বাস্তবায়নে তৎপর থাকবেন।

খ) তারা মুত্তাকী সুন্নতের পাবন্দ ও আদশ চরিত্রের অধিকারী হওয়া অপরিহায।

গ) তারা বিশেষতঃ আকাবেরে দেওবন্দের অনুসারী হওয়া জরুরী এবং তাদেরই চিন্তাধারা ও আদশ ছাড়া অন্য সব চিন্তাধারা ও আদশ বজন তাদের জন্য অপরিহায হবে।

ঘ) ছাত্রদেরকে আদশ মানুষ দ্বীনি জ্ঞানে বলিষ্ঠ এবং আমল আখলাকে উন্নত করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি শিক্ষককে সজাগ ও তৎপর থাকতে হবে।

ঙ) শিক্ষক কমচারীগণ শোরা আমেলা মজলিসে এলমী মুহতামিম ও নাজেমে তালীমাত কতৃক প্রদত্ত যাবতীয় আদেশ নিষেধ অনুসরণে বাধ্য থাকবেন।

চ) তারা নিজে দলীয় সক্রিয় রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন এবং ছাত্রদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখবেন।

ছ) শিক্ষকগণের জন্য নিধারিত সময়ের মধ্যে নিধারিত নেছাব (পাঠ্যসূচি) সমাপ্ত করা জরুরী। তারা শিক্ষা বছরের শুরু থেকে শেষ পযন্ত ভারসাম্য রক্ষা করে শিক্ষা দান করবেন।

জ) প্রতিটি সবকের ঘন্টায় ছাত্রদের হাজিরা করা শিক্ষকদের জন্য জরুরী হবে।

ঝ) শিক্ষক কমচারীগণ শিক্ষা দীক্ষায় উন্নয়ন সাধনের সাথে সাথে মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় অথ সংগ্রহের জন্যও চেষ্টা করবেন। রমজান কোরবানী ও ধান্য মৌসুমের ছুটিতে তাদের জন্য মাদ্রাসার তাহসীলী কাজ করা অপরিহায। অন্যথায় মুহতামিম তাদের বেতন কতন করতে পারবেন। তবে ঐ সশয় কোন শিক্ষক কমচারী মাদ্রাসার পক্ষ থেকে কোন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলে তিনি এ ধারার আওতায় পড়বেন না।

ঞ) নবনিযুক্ত শিক্ষককে ছয়মাস পযন্ত অস্থায়ী গণ্য করা হবে।

ট) শিক্ষক কমচারীগণ শোরা আমেলা মজলিসে এলমী মুহতামিম ও নাজেমে তালীমাতের নিকট জবাবদেহ থাকবেন।

ক) প্রতিটি শিক্ষক কমচারী প্রতি মাসে দুই দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করতে পারবেন। যদি কোন শিক্ষক প্রতি মাসে উক্ত ছুটি ভোগ না করে থাকেন তবে বছরের শেষের দিকে প্রয়োজনে এবং মাদ্রাসার শিক্ষা ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি না হওয়া সাপেক্ষে এক সাথে জমা থাকা ছুটি ভোগ করতে পারবেন। যেহেতু উক্ত হিসাব মতে বছরে মোট ২২ দিন নৈমিত্তিক ছুটি হয় সুতরাং মুহতামিম সাহেব কোন শিক্ষককে বিশেষ প্রয়োজনে ছুটি জমা হওয়ার পূবে অগ্রিম ছুটি মঞ্জুর করতে পারবেন। তবে নবনিযুক্ত শিক্ষক কমচারী এ সুযোগ পাবেন না।

খ) নৈমিত্তিক ছুটি সবাবস্থায় মুহতামিমের অনুমোদনক্রমেই ভোগ করা যাবে।

গ) নবনিযুক্ত শিক্ষক-কমচারীও মাসিক দুদিন ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

ঘ) শিক্ষক কমচারীগণ রোগের কারণে বছরে সবমোট এক মাস সবেতন ছুটি পাবেন। তবে মুহতামিম সাহেবের নিকট একথা প্রমাণিত হতে হবে যে তারা রোগজনিত কারণে শিক্ষকতা ও মাদ্রাসার খেদমতে সত্যিকারেই অপারগ হয়ে পড়েছেন। যদি রোগের মেয়াদ আরও দীঘ হয় তবে তারা বিনা বেতনে ছুটি পাবেন।

ঙ) কোন শিক্ষক কমচারী মুহতামিমের অনুমতি ব্যতিরেকে স্বল্প সময়ের জন্যও দায়িত্ব পালনে বিরত বা অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। অন্যথায় মুহতামিম তার বেতন কতন করতে পারবেন।

চ) যেহেতু মুহতামিম সবক্ষণ মাদ্রাসার কাজে ব্যস্ত থাকেন সুতরাং শোরার সদর বা আমেলার অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি অতিরিক্ত ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

ছ) ছুটি অনুমোদন ছাড়া কোন শিক্ষক কমচারী অনুপস্থিত থাকলে মুহতামিম তার বেতন কতন করতে পারবেন। যদি কেউ নিদিষ্ট সমেয়র ছুটি অনুমোদিত হওয়ার পর বিশেষ কারণে ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে মাদ্রাসায় উপস্থিত হতে পারেননি তবে অবিলম্বে মুহতামিমের নিকট অননুমোদিত অনুপস্থিতির ছুটি মঞ্জুরীর জন্য দরখাস্ত করবেন। মুহতামিম বিষয়টি বিবেচনা করে ওজর বাস্তব মনে করলে ছুটি মঞ্জুর করবেন। অন্যথায় বেতন কতন করা হবে।

জ) হেফজ ও নাজেরার শিক্ষকগণ এবং মাতরাখ ও হিসাব বিভাগের কমচারীগণ এবং এ ধরনের অন্যান্য কমচারীগণ যেহেতু মাদ্রাসার সাধারণ ছুটি পরিপূণভাবে ভোগ করতে পারেন না সুতরাং তাদের বাষিক নৈমিত্তিক ছুটি মাসে তিন দিন ও বছরে ৩৩ দিন হবে।

ঞ) যে কোন বন্ধের সময় ও তৎপর মাদ্রাসা খোলার তারিখে কোন শিক্ষক কমচারী হাজির না থাকলে তিনি বন্ধের বেতন পাবেন না। আর একদিকে অনুপস্থিত থাকলে বন্ধের অধেক বেতন পাবেন না। অনুরুপ শুক্রবারের বেতন তারাই পাবেন যারা বৃহস্পতিবার ও শনিবার উপস্থিত থাকবেন। আর এ দু দিনের যে কোন একদিন অনুপস্থিত থাকলে শুক্রবারের বেতন অধেক পাবেন।

ক) কোন শিক্ষক কমচারী মাদ্রাসার খেদমত ত্যাগের ইচ্ছা করলে তিনি অন্যূন এক মাস পূবে মুহতামিমকে লিখিতভাবে অবগত করবেন। অন্যথায় তার পক্ষে আঞ্জুমানভুক্ত কোন মাদ্রাসায় খেদমত গ্রহণ করা অবৈধ হবে। তবে মুহতামিম আকস্মিক অব্যাহতি লাভ অনুমোদন করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে না।

খ) যে কোন শিক্ষক কমচারীকে মাদ্রাসার খেদমত থেকে নিন্মলিখিত অজুহাতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অব্যাহতি দান করতে পারবে।

১) মাদ্রাসার আদশ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি আচরণ।

২) আকাবেরে দেওবন্দের চিন্তাধারা ও আদশের বিরুদ্ধাচরণ।

৩) মাদ্রাসার স্বাথবিরোধী ধ্বংসাত্মক কাযকলাপে জড়িত হওয়া।

৪) মাদ্রাসা কতৃপক্ষের আদেশ নিষেধ লংঘন করা।

৫) মারাত্মক চরিত্রহীনতা।

৬) নিজ দায়িত্বে অব্যাহত অবহেলা প্রদশন।

৭) ছুটি অনুমোদন ছাড়া এক নাগাদ এক মাস অনুপস্থিত থাকা।

৮) স্বাস্থ্যগত কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা।

প্রথম সাতটি ক্ষেত্রে যে কোন শিক্ষক কমচারী সতক করার পরও যদি নিজেকে সংশোধন না করেন তবে তাকে কারণ দশাও নোটিশ প্রদান করা হবে। অতঃপর কারণ দশানো যদি সন্তোষজনক না হয় তবে শরীয়ত সম্মত উপায়ে এ সকল দোষ প্রমাণিত হলে তাকে আমেলা অব্যাহতি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। প্রকাশ থাকে যে, অব্যাহতির ক্ষেত্রে আঞ্জুমানের কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ অপরিহার্য হবে এবং এ অব্যাহতি শোরার পরবতী অধিবেশনে অনুমোদন করাতে হবে।

ক) ৬ই শাওয়াল থেকে কোরবানীর ছুটি পযন্ত সাধারণ ভর্তি চালু থাকবে। এরপর নাজেমে তালীমাত বিশেষ ক্ষেত্রে মুহতামিমের অনুমতিক্রমে ছাত্র ভর্তি করাতে পারবে।

খ) নিদিষ্ট ভর্তি ফরমে ছাত্রদেরকে ভর্তি করতে হবে। নতুন ছাত্রদের ভর্তি ফরমে ছাত্রদের বিস্তারিত ঠিকানা, অভিভারব নিধারণ , বয়স পূববতী মাদ্রাসার নাম ঐ মাদ্রাসার অনুমতিপত্রের বিষয়, বিগত বছরে পঠিত কিতাবসমূহের উল্লেখ, বতমানে কাম্য কিতাবসমূহের উল্লেখ, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ম কানুন মানার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির জন্য নিদিষ্ট ঘর, নাজেমে দারুত্তোলবার ঘর এবং নাজেমে মাতবাখ নাজেমে তালীমাত ও মুহতামিমের মন্তব্য বা নিদেশের ঘর এবং ছাত্রের স্বাক্ষরের ঘর থাকতে হবে। আর পুরাতন ছাত্রদের ক্ষেত্রে পূববতী মাদ্রাসার বিষয় ছাড়া অন্যান্য সব বিষয় থাকবে। তবে বিভিন্ন সংশ্লিষ্টা বিভাগের রিপোটের ঘর থাকতে হবে।

গ) নতুন ছাত্রকে পূববতী মাদ্রাসার অনুমতি পত্র ছাড়া ভর্তি করা সম্পূণ অবৈধ হবে। ভতি করলে পূববর্তী মাদ্রাসা আঞ্জুমান কার্যলায়ে বিচারের প্রার্থনা করতে পারবে।

ঘ) ভর্তির সময় ছাত্রদেরকে বিশেষভাবে যাচাই করতে হবে এবং মাদ্রাসার আদশ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেসমূহ এবং মাদ্রাসার যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্য পৃথক ফরমে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করতে হবে।

ঙ) নতুন ছাত্রকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করতে হবে। তবে কোন ছাত্র বিগত বছরে কোন মাদ্রাসার আঞ্জুমান পরিচালিত মারকাজী পরীক্ষা পাশ করে থাকলে তাকে মারকাজী পরীক্ষার নম্বরের সনদের ভিত্তিতে পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করা যাবে।

চ) ভর্তির সময় ভর্তি ফিসসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট চাজ বা চাঁদা নেয়া যাবে। তবে সকল ছাত্রের শিক্ষা বিনা বেতনে দেয়া হবে।

ক) প্রতিটি ছাত্র মাদ্রাসার আদশ লক্ষ্য উদ্দেশ্যেসমূহের অনুসারী হওয়া অপরিহার্য হবে।

খ) বিশেষ করে আকাবেরে দেওবন্দের আদশ ও চিন্তাধারার অনুসরণ একান্ত জরুরী হবে।

গ) সুন্নাতের পাবন্দ, চুল, দাড়ি, ও লেবাস পোষাক শরীয়ত সম্মত সলফে ছালেহীননের অনুকরণভিত্তিক হতে হবে।

ঘ) মাদ্রাসার যাবতীয় নিয়ম-কানুন সবাবস্থায় পুংখানুপুংখ মেনে চলতে হবে।

ঙ) মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দের সাথে সদাচরণ ও আদব রক্ষা করা অপরিহার্য হবে।

চ) কোন ছাত্র মাদ্রাসায় যে কোন রূপ সংগঠন করতে বা তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

ছ) কোন সরকারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।

জ) কোন ছাত্র অন্য ছাত্রকে খারেজী পড়াতে বা তার তত্ত্বাবধান করতে পারবে না। কিন্ত কেউ যদি কোন ছাত্রের আইনতঃ অভিভাবক হয় তবে ভিন্ন কথা।

ঝ) কোন ছাত্র পূব অনুমোদিত ছুটি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।

ঞ) কোন ছাত্র অনুমতি ব্যতিরেকে এক ঘন্টার জন্যও সবকে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।

ট) কোন ছাত্র মাদ্রাসা কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জায়গীর গ্রহণ করতে পারবে না।

ক) তারা নাজেমে দারুত্তোলবার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাদের জন্য যাবতীয় নির্দেশ মেনে চলা একান্ত কর্তব্য।

খ) সবকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে তাদের তাকরার ও নিজে লেখাপড়া করার জন্য নিম্মলিখিত সময় নিধারিত থাকবে।

১) মাগরিবের নামাজের পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।

২) শেষ রাত্রি ও ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল ৯ঘটিকা পর্যন্ত।

গ) প্রতিদিন সকাল ৯ ঘটিকায় গোসলের ঘন্টা এবং ৯:৩০ ঘটিকায় খানার ঘন্টা হবে।

ঘ) আসরের নামাজের পর মাগরিব পর্যন্ত এবং সকাল ৯ ঘটিকার পর ১০:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত সময়ে সকলেই ব্যক্তিগত প্রয়োজন সমাধা করবে।

ঙ) ছাত্রাবাসের ছাত্রদের জন্য চায়ের দোকানে বসা নিষিদ্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নিজ কক্ষে এনে চা-নাস্তা করবে।

চ) নিজ নিজ আবাস কক্ষ এবং অগ্র-পশ্চাৎ পরিস্কার রাখা সকলের জন্য জরুরী।

ছ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মসজিদে জামাতে হাজির থাকা অপরিহার্য হবে।

জ) বিনা প্রয়োজনে অথবা সবক ও নিজের লেখাপড়া বা তাকরারের সময় বাজারে ঘোরাফেরা করা নিষিদ্ধ থাকবে।

ঝ) তাকরার ও লেখাপড়ার সময় নিজ কক্ষে বসে গল্প করা বা অন্য কাজ করা বা নিদ্রা গমন করা সম্পূণ নিষিদ্ধ।

ঞ) তাকরার বা লেখাপড়ার সময় বিশেষ প্রয়োজনে মাদ্রাসার বাইরে যেতে হলে নাজেমে দারুত্তোলবার অনুমতি নিতে হবে। তিনি না থাকলে অন্য কোন শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে।

ট) যে কোন সাথীর যে কোন জিনিস বিনা অনুমতিতে ব্যবহার মারাত্মক অপরাধ গণ্য হবে।

ঠ) নাজেমে দারুত্তোলবার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন সিট দখল বা নিজেদের মধ্যে সিটের রদবদল করা যাবে না।

ড) রেডিও শ্রবণ, নোবেল জাতীয় ও অশ্লীল বই-পুস্তক পাঠ, মোবাইল ব্যবহার অথবা আকাবেরে দেওবন্দের চিন্তাধারা বিরোধী বই-পুস্তক পাঠ নিষিদ্ধ।

ক) ধারা নং ২৮ এর চ ও ছ ছাড়া বাকী নিয়ম কানুনের বরখেলাফ করলে তালীমাত কতৃক উপযোগী শাস্তির পদক্ষেপ নিবে।

খ) ধারা নং- ২৯ এর বণিত নিয়ম কানুনের বিরুদ্ধাচরণ করলে নাজেমে দারুত্তোলবা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা প্রদান বা উপযোগী শাস্তি প্রদান করবেন।

গ) কোন ছাত্রকে ধারা নং-২৮ এর চ ও ছ এ বণিত কানুনের বিরুদ্ধাচরণ করতে পাওয়া গেলে তাকে বহিস্কার করা যাবে।

ঘ) কোন ছাত্রকে ধারা নং ২৮ এর চ ও ছ ছাড়া অন্যান্য নিয়ম কানুন এবং ২৯ এ বণিত যাবতীয় নিয়ম কানুনের বরখেলাফ করার কারণে সতর্ক করা এবং শাস্তি প্রদান করার পরও যদি সে বারংবার অপরাধ করছে বলে প্রমাণিত হয় তবে তাকে বহিস্কার করা যাবে।

ঙ) যদি কোন ছাত্র চুরি করেছে বলে প্রমাণিত হয় তবে তাকে বহিস্কার করা যাবে।

চ) কোন ছাত্র মারাত্মক ঝগড়া বিবাদ বা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাযকলাপে বা মারাত্মক চরিত্রহীনতায় দোষী প্রমাণিত হলে তাকে বহিস্কার করা হবে।

ছ) কোন ছাত্র বিনা ছুটিতে এক নাগাদ এক মাস অনুপস্থিত থাকলে তাকে বহিস্কৃত গণ্য করা হবে। তসে সে নিদ্ধারিত ফি দিয়ে মুহতামিমের অনুমতিতে পুণঃভর্তি পেতে পারে।

ক) মাদ্রাসার শিক্ষাবর্ষ ৬ই শাওয়াল আরম্ভ হয়ে ২৪ শে শাবান পযন্ত শেষ হবে।

খ) অথবষ ১লা শাবান থেকে আরম্ভ হয়ে ৩০শে রজব পর্যন্ত সমাপ্ত হবে।

গ) সবকের সময় ১০ বা ১০:৩০ ঘটিকায় শুরু হয়ে আসরের নামাজ পর্যন্ত গণ্য হবে। মাঝখানে জোহরের নামাজের জন্য বিরতি থাকবে ৪৫ মিনিট।

ঘ) বিভিন্ন বিভাগ ও কাযালয়ের সময় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ মুহতামিমের সাথে পরামর্শক্রমে নির্ধারিত করবেন।

ঙ) নাজেরা ও হেফজ বিভাগের সময় মুহতামিম সাহেব মজলিসে এলমীর পরামর্শক্রমে নির্ধারণ করবেন।

ক) প্রতি বছর ২৫ শাবান থেকে ৫ই শাওয়াল পযন্ত রমজান উপলক্ষে মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে। তাবে হেফজ বিভাগ ও নাজেরার বন্ধ ২১ রমজান থেকে আরম্ভ হবে।

খ) কোরবানী উপলক্ষে মাদ্রাসা ৫ই জিলহাজ¦ থেকে ১৬ই জিলহাজ্ব পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মুহতামিম এতে রদবদল করতে পারবে।

গ) প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন কাযালয় ও মতবখ ছাড়া বাকী বিভাগগুলো বন্ধ থাকবে।

ঘ) সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিন দিন এবং বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্ততির জন্য ১৫ দিন সবক বন্ধ থাকবে।

ঙ) ধান্য মৌসুমে মাদ্রাসার আর্থিক প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ দেওয়া যাবে।

চ) বন্ধকালীন সময়ে কোন শিক্ষক বা কমচারীকে মুহতামিম মাদ্রাসার বিশেষ কোন কাজের জন্য নির্দেশ প্রদান করলে তিনি তা করার জন্য বাধ্য থাকবেন। তবে তাঁর জন্য বিশেষ এমদাদ পাবেন।

ক) এমদাদী খোরাকী পাওয়ার জন্য জাকাতের উপযোগী দরিদ্র হওয়া শর্ত।

খ) প্রতিটি পরীক্ষায় গড়ে শতকরা ৬০ নম্বর না পেলে এমদাদী খোরাকী পাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মুহতামিমের বিশেষ বিবেচনা করার অধিকার থাকবে।

গ) নতুন ছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় শতকরা ৬০ নম্বর পেলে এমদাদী খোরাকী পাবে। তবে প্রথম এক মাসের খোরাকী নিজে বহন করতে হবে। এর চেয়ে কম নম্বর পেলে নাজেমে তালীমাতের মন্তব্যের ভিত্তিতে মুহতামিম সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।

ঘ) প্রতি শিক্ষা বছরের শুরুতে এবং কোরবানীর বন্ধের পর প্রতি ছাত্র কমপক্ষে এক মাসের খোরাকীর পরিমাণ তাহছীল মাদ্রাসায় জমা দিবে। অন্যথায় যে পরিমাণ তাহছিল কম হবে সে পরিমাণ খোরাকী নিজ দায়িত্বে থাকবে।

ক) মাদ্রাসা সমূহে সাধারণ দ্বীনি শিক্ষার বিভিন্ন স্তর নিম্মরূপ হবেঃ-

ইবতেদাইয়্যাহ :      ফোরকানিয়া ১ম ও ২য় বর্ষ

এবং দোয়াজদাহুম থেকে জমাতে দাহুম পর্যন্ত          ৫ বছর

মুতাওয়াসসিতাহ :    নাহুম – হাশতুম                   ২ বছর

সানবিয়্যাহ আম্মাহ :  হাফতুম – শাশুম                  ২ বছর

সানবিয়্যাহ খাচ্ছাহ : পাঞ্জুম-চাহারুম                    ২ বছর

আলিয়্যাহ :           সুয়াম- দুয়াম                        ২ বছর

আলমিয়্যাহ :          দাওরায়ে হাদীস                   ২ বছর

মোট ১৫ বছর

 

খ) তাখাসসুসাতঃ

তাখাসসুস ফি- উলুমিল কোরআন           ১ বছর

তাখাসসুস ফি উলুমিল হাদীস                ১ বছর

তাখাসসুস ফিলফিকহ্                         ২ বছর

তাখাসসুস ফিললুগাতিল আরবিয়্যা          ২ বছর

তাখাসসুস ফিললুগাতিল ওয়াতানিয়্যাহ      ২ বছর

তাখাসসুস ফি তাকমীলিদ্দীনিয়াত            ১ বছর

তাখাসসুস ফিল উলুমিল আকলিয়্যাহ       ১ বছর

তাখাসসুস ফিল ইকতেছাদিল ইসলামী      ১ বছর

গ) কেরাত বিভাগের শিক্ষাকাল মাদ্রাসার শিক্ষাগত আয়োজন ভেদেগ ২ বছর বা ১ বছর থাকবে।

ঘ) প্রয়োজনে এছাড়া অন্যান্য তাখাসুসাত বা বিভাগ খোলা হবে।

ঙ) যে কোন মাদ্রাসায় কোন জমাত পর্যন্ত শিক্ষা চালু থাকবে তা আঞ্জুমান যাচাই করে সিদ্ধান্ত দিবে।

চ) কোন মাদ্রাসায় নতুন কোন শ্রেণী খোলতে ইচ্ছা করলে আঞ্জুমানের অনুমতি প্রয়োজন হবে। অনুমতির জন্য আবেদন করার পর আঞ্জুমান যথাযথ যাচাই ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

ক) প্রতি মাদ্রাসায় বাষিক তিনটি পরীক্ষা হবে।

ত্রৈমাসিক পরীক্ষা- ছফর মাসের ১ম সপ্তাহে।

ষাম্মাসিক পরীক্ষা- জুমাদাল উলার ১ম সপ্তাহে।

বাষিক পরীক্ষা- শা’বান মাসে।

খ) আঞ্জুমান পরিচালিত মারকাজী পরীক্ষা প্রতি মারহালণা বা স্তরের শেষ বষে শাবান মাসে অনুষ্টিত হবে।

গ) আঞ্জুমানভূক্ত প্রতি মাদ্রাসার জন্য মারকাজী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অপরিহায হবে। পরীক্ষায় যাবতীয় নিয়ম কানুন আঞ্জুমান কতৃক প্রদত্ত হবে।

ঘ) ভবিষ্যতে আঞ্জুমানের শোরার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে তাখাসসুসগুলির মারকাজী পরীক্ষাও নেয়া যেতে পারে।

ঙ) জমাতে দাহুম পযন্ত কিতাবসমূহের এবং হেফজ ও নাজেরার পরীক্ষা মৌখিক গ্রহণ করা হবে। বাকী জামাতগুলোর পরীক্ষা লিখিতভাবে হবে।

চ) প্রতি কিতাবের সাময়িক পরীক্ষা ঐ কিতাবের শিক্ষকই গ্রহণ করবেন। বাষিক পরীক্ষা ভিন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। আর মারকাজী পরীক্ষা ভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকের মাধ্যমে নিধারিত নিয়মে গ্রহণ করা হবে।

ছ) মারকাজীসহ প্রতি পরীক্ষায় সবোচ্চ নম্বর ১০০ এবং পাশের নম্বর ৩৩ হবে। আর দরজা বা বিভাগ নিধারণ নিম্মরূপ হবে।

মোমতাজ              ৮০-১০০

জাইয়িদ জিদ্দান       ৬০-৭৯

জাইয়িদ               ৪৫-৫৯

মাকবুল                ৩৩-৪৪

৩৩ এর কম নম্বর পেলে রাসেব অথাৎ অকৃতকায গণ্য হবে।

জ) যদি কোন ছাত্র গড়ে প্রতি কিতাবে ৩৩ নম্বর লাভ করে তবে একটি কিতাব অকৃতকায হলেও তাকে পাশ ঘোষণা করা হবে।

ঝ) মাদ্রাসা যদি ছাত্রদেরকে পুরস্কার দিতে চায় তবে জাইয়িদ জিদ্দান এবং মোমতাজে উত্তীণ ছাত্রদেরকেই দিতে পারে।

ক) মাদ্রাসার যে কোন আয়  রসিদের মাধ্যমে এবং যে কোন ব্যয় ভাউচারের মাধ্যমে হওয়া অপরিহার্য।

খ) মাদ্রাসার চাঁদা ও ছদকা তহবিলের আয় ব্যয় সম্পণ পৃথক রাখতে হবে এবং দাতা যে অর্থ যে উদ্দেশ্যে দান করবে সেই খাতেই ব্যয় করতে হবে।

গ) চাঁদা ফান্ডে এককালীন দান, মাসিক ও বাষিক চাঁদা, মওসুমী ফসলের চাঁদা, বাষিক সভার চাঁদা, নিমাণ চাঁদা, কিতাবের জন্য চাঁদা ও নফল সদকা প্রভৃতি অর্থ জমা হবে।

ঘ) নিদিষ্ট মুহাসিব যাবতীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন। মুহতামিমের হাতে টাকা জমা থাকবেনা। তিনি নিজ হাতে হিসাবও রাখবেন না।

ঙ) শোরা বা আমেলা কতৃক নিধারিত পরিমাণ নৈমিত্তিক খরচের টাকা মুহাসিবের হাতে জমা থাকবে। বাকী টাকা ব্যাংকে জমা হবে।

চ) শোরা বা আমেলা কতৃক মনোনীত ব্যক্তিই ব্যাংক হিসাবের পরিচালক থাকবেন। তবে মুহতামিম অবশ্যই অন্যতম পরিচালক থাকবেন।

ছ) চাঁদা ফান্ডের অর্থ দ্বারা শিক্ষক কমচারীর বেতন, নিমাণ কাজ, জমি খরিদ, কিতাব খরিদ, মসজিদ নিমাণ ও মাদ্রাসার সাধারণ ব্যয় নির্বাহ করা হবে। তবে শিক্ষক- কমচারীদের বেতন সবাবস্থায় অগ্রাধিকার পাবে।

জ) ছদকা ফান্ডের অর্থ দ্বারা একমাত্র দরিদ্র ছাত্রদের খোরপোষ প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হবে। অন্য কোন ব্যয় এ অথ দ্বারা নির্বাহ করা চলবে না।

ক) শোরা বা আমেলা কতৃক মনোনীত অডিটরগণ মাসিক ও বাষিক অডিট করবেন। এটা প্রতি মাদ্রাসার জন্য অপরিহার্য। অডিটের পর যাবতীয় হিসাব শোরায় অনুমোদন করে নিতে হবে।

খ) পরবতীতে চার্টার্ড একাউন্টের দ্বারা অডিট করানো উত্তম হবে।

গ) আঞ্জুমান কর্তৃক নিযুক্ত পরিদর্শকও পরিদর্শনকালে হিসাবের পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন।

ক) প্রতি মাদ্রাসার জন্য বার্ষিক একবার আঞ্জুমানের পরিদর্শক দ্বারা মাদ্রাসা পরিদর্শন করানো জরুরী। কেবল এ পরিদর্শনের ভিত্তিতে মাদ্রাসাকে আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে সুপারিশ বা সত্যায়ন পত্র প্রভৃতি প্রদান করা হবে।

খ) পরিদর্শন যাতায়াত খরচ মাদ্রাসাই বহন করবে।

ক) প্রতি মাদ্রাসার শিক্ষক কমচারীদের জন্য সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার শোরা একটি উপযোগী চাকুরীবিধি করে দিবে।

খ) শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ এ চাকুরীবিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দিতে হবে।

ক) যদি কোন মাদ্রাসার মুহতামিম যথারীতি মাদ্রাসার শোরা অধিবেশন আহব্বান না করেন এবং আঞ্জুমান কতৃপক্ষ শোরা আহব্বানের নিদেশ দেয়া সত্ত্বেও মুহতামিম সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেন, তবে আঞ্জুমানের সভাপতি বা নাজেম তলবী সভা আহব্বান করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

খ) তলবী সভা এক সপ্তাহের নোটিশে আহবান করা যাবে।

গ) অত্র তলবী সভায় মুহতামিমকে অপসারণের বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনা করা যাবে।

অত্র দস্তুরের কোন ধারা উপধারার সংশোধন বা তাতে সংযোজনের প্রয়োজন দেখা দিলে আঞ্জুমানের শোরা অধিবেশনে অধিকাংশের মতামতে তা করা যাবে।

(সমাপ্ত)